পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোরা 之8@ স্বচরিতা অনেক ক্ষণ চুপ করিরা বসিয়া রহিল দেখিয়া গোরা কছিল, “আমাকে আপনি একটা গোড়া ব্যক্তি বলে মনে করবেন না । হিন্দুধৰ্ম লম্বন্ধে গোড়া লোকেরা, বিশেষত যারা হঠাৎ নতুন গোড়া হয়ে উঠেছে, তারা ষে ভাবে কথা কয় আমার কথা লে ভাবে গ্রহণ করবেন না । ভারতবর্ষের নানা প্রকার প্রকাশে এবং বিচিত্র চেষ্টার মধ্যে আমি একটা গভীর ও বৃহং ঐক্য দেখতে পেয়েছি, সেই ঐক্যের আনন্দে আমি পাগল । সেই ঐক্যের আনন্দেই, ভারতবর্ষের মধ্যে যারা মূঢ়তম তাদের সঙ্গে এক দলে মিশে ধুলোয় গিয়ে বসতে আমার মনে কিছুমাত্র সঙ্কোচ বোধ হয় না। ভারতবর্ষের এই বাণী কেউ বা বোঝে কেউ বা বোঝে না— তা নাই হল— আমি আমার ভারতবর্ষের সকলের সঙ্গে এক— তারা আমার সকলেই আপন— তাদের সকলের মধ্যেই চিরন্তন ভারতবর্ষের নিগৃঢ় আবির্ভাব নিয়ত কাজ করছে, সে সম্বন্ধে আমার মনে কোনো সন্দেহমাত্র নেই ।” গোরার প্রবল কণ্ঠের এই কথাগুলি ঘরের দেয়ালে টেবিলে, সমস্ত আসবাবপত্রেও যেন কঁাপিতে লাগিল । এ-সমস্ত কথা স্বচরিতার পক্ষে খুব স্পষ্ট বুঝিবার কথা নহে— কিন্তু অনুষ্কৃতির প্রথম অস্পষ্ট সঞ্চারেরও বেগ অত্যন্ত প্রবল । জীবনট ষে নিতাস্তই চারটে দেয়ালের মধ্যে বা একটা দলের মধ্যে বদ্ধ নহে, এই উপলব্ধিট স্বচরিতাকে যেন পীড়া দিতে লাগিল । এমন সময় সিঁড়ির কাছ হইতে মেয়েদের উচ্চহাস্তমিশ্রিত দ্রুত পদশব্দ শুনা গেল। বরদাসুন্দরী ও মেয়েদের লইয়া পরেশবাবু ফিরিয়াছেন । সুধীর সিড়ি দিয়া উঠিবার সময় মেয়েদের উপর কী একটা উৎপাত করিতেছে, তাহাই লইয়া এই হাতধ্বনির সৃষ্টি । লাবণ্য ললিতা ও সতীশ ঘরের মধ্যে ঢুকিরাই গোরাকে দেখিয়া সংযত হইয়া দাড়াইল । লাবণ্য ঘর হইতে বাহির হইয়া গেল— সতীশ বিনয়ের চৌকির পাশে দাড়াইয়া কানে কানে তাহার সহিত বিশ্রম্ভালাপ শুরু করিয়া দিল । ললিতা মুচরিতার পশ্চাতে চৌকি টানিয়া তাছার আড়ালে অদৃশুপ্রায় হইয়া বলিল । পরেশ আসিয়া কছিলেন, “আমার ফিরতে বড়ো দেরি হয়ে গেল। পাছবাৰু ৰুকি চলে গেছেন ?" স্বচরিতা তাহার কোনো উত্তর দিল না ; বিনয় কছিল, “হা, তিনি থাকতে পারলেন ন; ”