গোরা 8 ఏ গোরার তিরস্কারে অবিনাশ ক্ষুব্ধ হইয়া কহিল, “আপনি অন্যায় বলছেন। আপনি কারাবাসে যে দুঃখ ভোগ করেছেন আমরা তার চেয়ে কিছুমাত্র কম সহ করি নি। এই এক-মাস-কাল প্রতিমুহূর্ত তুষানলে আমাদের বক্ষের পঞ্চর দগ্ধ হয়েছে।” গোরা কছিল, "ভুল করছ অবিনাশ, একটু তাকিয়ে দেখলেই দেখতে পাবে তুষগুলো এখনো সমস্তই গোটা আছে, বক্ষের পঞ্জরেও মারাত্মক রকম লোকশান হয় नेि ।” অবিনাশ দমিল না ; কছিল, “রাজপুরুষ আপনার অপমান করেছে, কিন্তু আজ সমস্ত ভারতভূমির মুখপাত্র হয়ে আমরা এই সম্মানের মাল্য—” গোরা বলিয়া উঠিল, “আর তো সন্থ হয় না।” অবিনাশ ও তাহার দলকে এক পাশে সরাইয়া দিয়া গোরা কহিল, “পরেশবাৰু, গাড়িতে উঠুন।” পরেশবাবু গাড়িতে উঠিয়া ইপি ছাড়িয়া বাচিলেন। গোরা ও বিনয় তাহার অমুসরণ করিল। সটীমারযোগে যাত্রা করিয়া পরদিন প্রাতঃকালে গোরা বাড়ি আসিয়া পৌছিল । দেখিল বাহির-বাড়িতে তাহার দলের বিস্তর লোক জটলা করিয়াছে। কোনোক্রমে তাছাদের হাত হইতে নিষ্কৃতি লইয়া গোরা অস্তঃপুরে আনন্দময়ীর কাছে গিয়া উপস্থিত হইল । তিনি আজ সকাল-লকাল স্নান সরিয়া প্রস্তুত হইয়া বসিয়া ছিলেন । গোর আসিয়া তাহার পায়ে পড়িয়া প্রণাম করিতেই আনন্দময়ীর দুই চক্ষু দিয়া জল পড়িতে লাগিল । এতদিন যে অশ্র তিনি অবরুদ্ধ রাখিয়াছিলেন আজ আর কোনোমতেই তাহা বাধা মানিল না । কৃষ্ণদয়াল গঙ্গাস্নান করিয়া ফিরিয়া আসিতেই গোরা উহার সহিত দেখা করিল। দূর হইতেই উহাকে প্রণাম করিল, উস্থিার পদম্পর্শ করিল না। কৃষ্ণদয়াল সসংকোচে দূরে আসনে বলিলেন। গোরা কহিল, “বাবা, আমি একটা প্রায়শ্চিত্ত করতে চাই ।” কৃষ্ণদয়াল কছিলেন, “তার তো কোনো প্রয়োজন দেখি নে ৷” গোরা কহিল, “জেলে আমি আর-কোনো কষ্ট গণ্যই করি নি, কেবল নিজেকে অত্যন্ত অশুচি বলে মনে হত, সেই মানি এখনো আমার ধায় নি— প্রায়শ্চিত্ত করতেই হবে ।” কৃষ্ণদয়াল ব্যস্ত হইয়া কছিলেন, “না না, তোমার অত বাড়াবাড়ি করতে হবে না । আমি তো ওতে মত দিতে পারছি নে ৷” গোরা কছিল, "আচ্ছা, আমি নাহয় এ সম্বন্ধে পণ্ডিতদের মত নেব।”
