পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোরা Q&〉 (ყ&) স্বচরিতা পরেশের কাছে যে কথা কয়টি শুনিল তাহ গোরাকে বলিবার জন্ত তাহার মন অত্যন্ত ব্যাকুল হইয়া উঠিল । যে ভারতবর্ষের অভিমুখে গোরা তাহার দৃষ্টিকে প্রসারিত এবং চিত্তকে প্রবল প্রেমে আকৃষ্ট করিয়াছে, এত দিন পরে সেই ভারতবর্ষে কালের হস্ত পড়িয়াছে, সেই ভারতবর্ষ ক্ষয়ের মুখে চলিয়াছে, সে কথা কি গোরা চিস্তা করেন নাই ? এতদিন ভারতবর্ষ নিজেতে বাচাইয়া রাখিয়াছে তাহার আভ্যস্তরিক ব্যবস্থার বলে ; সেজন্ত ভারতবাসীকে সতর্ক হইয়া চেষ্টা করিতে হয় নাই । আর কি তেমন নিশ্চিস্ত হইয়া বাচিবার সময় আছে ? আজ কি পূর্বের মতো কেবল পুরাতন ব্যবস্থাকে আশ্রয় করিয়া ঘরের মধ্যে বসিয়া থাকিতে পারি ? স্বচরিতা ভাবিতে লাগিল, ইহার মধ্যে আমার ও তো একটা কাজ আছে-- লে কাজ কী ? গোরার উচিত ছিল এই সময়ে তাহার সম্মুখে আসিয়া তাহাকে আদেশ করা, তাহাকে পথ দেখাইয়া দেওয়| স্বচরিতা মনে মনে কহিল, ‘আমাকে তিনি যদি আমার সমস্ত বাধা ও অজ্ঞতা হইতে উদ্ধার করিয়া আমার যথাস্থানে দাড় করাইয়া দিতে পারিতেন তবে কি সমস্ত ক্ষুদ্র লোকলজ্জ ও নিন্দা-অপবাদকে ছাড়াইয়াও তাহার মূল্য ছাপাষ্টয়া উঠিত না ? স্বচরিতার মন আত্মগৌরবে পূর্ণ হইয়া দাড়াইল । সে বলিল— গোরা কেন তাহাকে পরীক্ষা করিলেন না, কেন তাহাকে অসাধ্য সাধন করিতে বলিলেন না- গোরার দলের সমস্ত পুরুষের মধ্যে এমন একটি লোক কে আছে যে সুচরিতার মতো এমন অনায়াসে নিজের যাহা-কিছু আছে সমস্ত উৎসর্গ করিতে পারে ? এমন একটা আত্মত্যাগের আকাঙ্ক্ষা ও শক্তির কি কোনো প্রয়োজন গোরা দেখিল না ? ইহাকে লোকলজ্জার-বেড়া দেওয়া কর্মহীনতার মধ্যে ফেলিয়া দিয়া গেলে তাহাতে দেশের কিছুমাত্র ক্ষতি নাই ? স্বচরিতা এই অবজ্ঞাকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করিয়া দূরে সরাইয়া দিল। সে কছিল, "আমাকে এমন করিয়া ত্যাগ করিবেন এ কখনোই হইতে পরিবে না। আমার কাছে র্তাহাকে আসিতেই হইবে, আমাকে তাহার সন্ধান করিতেই হইবে, সমস্ত লজ্জা-সংকোচ তাহাকে পরিত্যাগ করিতেই হইবে— তিনি যতবড়ো শক্তিমান পুরুষ হোন, আমাকে তাহার প্রয়োজন আছে এ কথা তাহার নিজের মুখে একদিন আমাকে বলিয়াছেন। আজ অতি তুচ্ছ জল্পনায় এ কথা কেমন করিয়া তুলিলেন!’ সতীশ চুটিয়া আসিয়া স্বচরিতার কোলের কাছে দাড়াইয়া কছিল, “দিদি ”