পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোরা ese শব্দ-সহযোগে তৈল মর্দন করিতেছে। সে তাহাকে দেখিয়া কোনো সংকোচ মানিল না —বিশেষ কৌতুহলের সহিত তাহার প্রতি দৃষ্টিপাত করিল। উপরে গিয়া হরিমোহিনী তাহার দেবরের আগমন-সংবাদ স্বচরিতাকে জানাইলেন। পূর্বের ভূমিকার সহিত মিলাইয়া লইয়া স্বচরিতা এই ঘটনাটির অর্থ ঠিকমতোই বুঝিল । হরিমোহিনী তাহাকে বুঝাইবার চেষ্টা করিলেন, বাড়িতে অতিথি আসিয়াছে এমন অবস্থায় তাহাকে ফেলিয়া আজই মধ্যাহ্নে চলিয়া যাওয়া তাহার পক্ষে ভদ্রাচার হইবে না । স্বচরিতা খুব জোরের সঙ্গে ঘাড় নাড়িয়া কছিল, “না মালি, আমাকে যেতেই হবে।” হরিমোহিনী কহিলেন, “তা বেশ তো, আজকের দিনটা থেকে তুমি কাল যেয়ো ।” স্বচরিতা কহিল, “আমি এখনই স্নান করেই বাবার ওখানে খেতে যাব, সেখান থেকে ললিতার বাড়ি যাব ।” তখন হরিমোহিনী স্পষ্ট করিয়াই কহিলেন, “তোমাকেই যে দেখতে এসেছে।” স্বচরিতা মুখ রক্তিম করিয়া কহিল, “আমাকে দেখে লাভ কী ?” হরিমোহিনী কছিলেন, “শোনো একবার ! এখনকার দিনে না দেখে কি এ-সব কাজ হবার জো আছে! সে বরঞ্চ সেকালে চলত। তোমার মেসো শুভদৃষ্টির পূর্বে আমাকে দেখেন নি।” এই বলিয়াই এই স্পষ্ট ইঙ্গিতের উপরে তাড়াতাড়ি আরও কতকগুলা কথা চাপাইয়া দিলেন । বিবাহের পূর্বে কন্যা দেখিবার সময় তাহার পিতৃগৃহে স্ববিখ্যাত রায়-পরিবার হইতে অনাথবন্ধুনামধারী তাহাদের বংশের পুরাতন কর্মচারী ও ঠাকুরদাসীনায়ী প্রবীণা কি, দুই জন পাগড়ি-পরা দণ্ডধারী দরোয়ানকে লইয়া কিরূপে কস্তা দেখিতে আসিয়াছিল এবং সেদিন তাহার অভিভাবকদের মন কিরূপ উদবিগ্ন হইয়া উঠিয়াছিল এবং রায়-বংশের এই সকল অহচরকে আহারে ও আদরে পরিতুষ্ট করিবার জন্য সেদিন তাহাদের বাড়িতে কিরূপ ব্যস্ততা পড়িয়া গিয়াছিল, তাহা বর্ণনা করিয়া দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিলেন এবং কছিলেন– এখন দিন ক্ষণ অন্তরকম পড়িয়াছে। হরিমোহিনী কহিলেন, “বিশেষ কিছুই উৎপাত নেই, একবার কেবল পাচ মিনিটের জন্তে দেখে যাবে।” স্বচরিতা কহিল, "না।” § সে "না" এতই প্রবল এবং স্পষ্ট ষে হরিমোহিনীকে একটু হঠিতে হইল। তিনি কছিলেন, “আচ্ছা বেশ, তা নাই হল । দেখার তো কোনো দরকার নেই, তবে