পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৬৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লোকসাহিত্য VHථිL তাহাদের ছন্দোবন্ধ সৌন্দৰ সমস্ত ভাঙিয়া নিতাস্ত স্বলভ করিয়া দিয়া, অত্যন্ত লঘু স্বরে উচ্চৈঃস্বরে চারিজোড়া ঢোল ও চারিপানি কঁাসি -সহযোগে সদলে সবলে চীৎকার করিয়া আকাশ বিদীর্ণ করিতে লাগিল । কেবল গান শুনিবার এবং ভাবরস সত্তোগ করিবার যে স্বখ তাহাতেই তখনকার সভ্যগণ সন্তুষ্ট ছিলেন না, তাহার মধ্যে লড়াই এবং হার-জিতের উত্তেজনা থাকা আবশ্বক ছিল । সরস্বতীর বীণার তারেও ঝন ঝন শব্দে ঝংকার দিতে হইবে, আবার বীণার কাষ্ঠদণ্ড লইয়াও ঠক্ ঠক্ শব্দে লাঠি খেলিতে হইবে । নূতন হঠাং-রাজার মনোরঞ্জনার্থে এই এক অপূর্ব নূতন ব্যাপারের স্বষ্টি হঠল । প্রথমে নিয়ম ছিল, দুই প্রতিপক্ষদল পূর্ব হইতে পরস্পরকে জিজ্ঞাসা করিয়া উত্তর-প্রত্যুত্তর লিথিয়া আনিতেন ; অবশেষে তাহাতেও তৃপ্তি হইল না, আসরে বসিয়া মুখে মুখেই বাগযুদ্ধ চলিতে লাগিল । এরূপ অবস্থায় যে কেবল প্রতিপক্ষকে আঠত করা হয় তাহা নহে, ভাষা ভাব ছন্দ সমস্তই ছfরথার হইতে থাকে । শ্রোতারাও বেশি কিছু প্রত্যাশ করে না— কথার কৌশল, অকুপ্রাসের ছটা এবং উপস্থিতমত জবাবেই সভা জমিয় উঠে এবং বাহব| উচ্ছসিত হঠতে থাকে। তাহার উপরে আবার চারজোড়া ঢোল, চারথন কঁসি এবং সম্মিলিত কণ্ঠের প্রাণপণ চীংকার— বিজনবিলাসিনী সরস্বতী এমন সভায় অধিকক্ষণ টিকিতে পারেন না । সৌন্দর্যের সরলতা ষাহাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে না, ভাবের গভীরতায় যাহাদের নিমগ্ন হইবার অবসর নাই, ঘন ঘন অনুপ্রাসে অতি শীঘ্রই তাহাদের মনকে উত্তেজিত করিয়া দেয় । সংগীত যখন বর্বর অবস্থায় থাকে তখন তাহাতে রাগরাগিণীর যতই অভাব থাকু, তালপ্রয়োগের থচমচ কোলাহল যথেষ্ট থাকে স্বরের অপেক্ষ সেই ঘন ঘন সশস্ত্র আঘাতে অশিক্ষিত চিত্ত সহজে মাতিয়া উঠে। এক শ্রেণীর কবিতায় অতু প্রাস সেইরূপ ক্ষণিক ত্বরিত সহজ উত্তেজনার উদ্রেক করে। সাধারণ লোকের কৰ্ণ অতি শীঘ্র আকর্ষণ করিবার এমন সুলভ উপায় অল্পই আছে। অনুপ্রাস যখন ভাব ভাষা ও ছন্দের অনুগামী হয় তখন তাহাতে কাব্যের সৌন্দর্য বুদ্ধি করে, কিন্তু সে সকলকে ছাড়াইয়া ছাপাইয়া উঠিয়া যখন মূঢ় লোকের বাহবা লইবার জন্ত অগ্রসর হয় তখন তন্দ্বারা সমস্ত কবিতা ইতরতা প্রাপ্ত হয় । কবিদলের গানে অনেক স্থলে অনুপ্রাস, ভাব ভাষা এমন-কি ব্যাকরণকে ঠেলিয়া ফেলিয়া শ্রোতাদের নিকট প্ৰগলভত প্রকাশ করিতে অগ্রসর হয় । অথচ তাহার যথার্থ কোনো নৈপুণ্য নাই ; কারণ, তাহাকে ছন্দোবন্ধ অথবা কোনো নিয়ম রক্ষণ করিয়াই চলিতে হয় না। কিন্তু যে শ্রোতা কেবল ক্ষণিক আমোদে মাতিয়া উঠতে চাহে, সে এত বিচার করে না এবং সাহাতে বিচার আবশ্বক এমন