পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\O AO রবীন্দ্র-রচনাবলী শৌরসেনী (পাশ্চাত্য হিন্দি), মাগধী অথবা প্ৰাচ্য (প্রাচ্য হিন্দি), ওড়ী (উড়িয়া), গৌড়ী (স্বাংলা), দাক্ষিণাত্য অথৱা বৈদাৰ্ভিক (মারাঠি) এবং সৈপ্ল্যলী (নেপালী?)। উক্ত অপভ্ৰংশ তালিকার মধ্যে শৌরসেনী ও মাগধী নাম আছে কিন্তু মহারাষ্ট্ৰী নাম ব্যবহৃত হয় নাই। মহারাষ্ট্ৰী যে ভারতবষীয় কোনো দেশ-বিশেষের কথিত ভাষা ছিল না। তাহা হাির্নলে সাহেব প্রতিপন্ন করিয়াছেন। বিশেষত আধুনিক মহারাষ্ট্রদেশ-প্রচলিত ভাষার অপেক্ষা পশ্চাত্য হিন্দি ভাষার সহিত তাহার ঘনিষ্ঠতর সাদৃশ্য আছে। প্রাকৃত নাটকে দেখা যায় শৌরসেনী গদ্যাংশে এবং মহারাষ্ট্ৰী পদ্যাংশে ব্যবহৃত হইয়া থাকে, ইহা হইতেও কতকটা প্রমাণ হয়। মহারাষ্ট্ৰী সাহিত্য-ভাষা ছিল, কথায়-বার্তায় তাহার ব্যবহার ছিল না। ... . কিন্তু আমাদের মতে, ইহা হইতে প্রমাণ হয় না যে, মহারাষ্ট্ৰী কোনো কালেই কথিত ভাষা ছিল না এবং তােহা সাহিত্যকারদের রচিত কৃত্রিম ভাষা। সর্বদা ব্যবহারের ঘর্ষণে চলিত কথায় ভাষার প্রাচীন রূপ ক্রমশ পরিবর্তিত হইতে থাকে, কিন্তু কাব্যে তাহা বহুকাল স্থায়িত্ব লাভ করে। বাহিরের বিচিত্র সংস্রব্যে পুরুষসমাজে যেমন ভাষা এবং প্রথার যতটা দ্রুত রূপান্তর ঘটে অন্তঃপুরের স্ত্রীসমাজে সেরূপ ঘটে না— কাব্যেও সেইরূপ। আমাদের বাংলা কাব্যের ভাষায় তাহার অনেক দৃষ্টান্ত পাওয়া যাইবে। বাংলা কাব্যে “ছিল” শব্দের স্থলে “আছিল”, প্রথম পুরুষ “করিল" শব্দের স্থলে “করিলা", “তােমাদিগকে” স্থলে “তোমা সবে” প্রভৃতি যে-সকল রূপান্তর প্রচলিত আছে তাহাই যে কথিত ংলার প্রাচীন রূপ ইহা প্রমাণ করা শক্ত নহে। এই দৃষ্টান্ত হইতেই সহজে অনুমান করা যায় যে, প্রাকৃত সাহিত্যে মহারাষ্ট্ৰী নামক পদ্য ভাষা শৌরসেনী অপভ্রংশ অপেক্ষা প্রাচীন আদর্শমূলক হওয়া অসম্ভব নহে। পূর্বেই বলা হইয়াছে শৌরসেনী-অপভ্রংশ প্রাকৃত-সাহিত্যের গদ্য ভাষা। সাহিত্য-প্রচলিত গদ্য ভাষার সহিত কথিত ভাষার সর্বাংশে ঐক্য থাকে না তাহাও বাংলা ভাষা আলোচনা করিলে দেখা যায়। একটা ভাষা যখন বহুবিস্তৃত দেশে ব্যাপ্ত হইয়া পড়ে তখন তাহা ভিন্ন ভিন্ন রূপ ধারণ করেই—কিন্তু লিখিবার ভাষা নিয়মে এবং স্থায়ী আকারে বদ্ধ হইয়া দেশান্তর ও কালান্তরের বিকৃত অনেকটা প্রত্যাখ্যানপূর্বক নানাস্থানীয় পণ্ডিতসাধারণের ব্যবহারযোগ্য ও বোধগম্য হইয়া থাকে, এবং তাহাই স্বভাবত ভদ্রসমাজের আদর্শ ভাষারূপে পরিণত হয়। চট্টগ্রাম ৷ হইতে ভাগলপুর এবং আসামের সীমান্ত হইতে বঙ্গসাগরের তীর পর্যন্ত বাংলা ভাষার বিচিত্ররূপ আছে সন্দেহ নাই। কিন্তু সাহিত্য-ভাষায় স্বতই একটি স্থির আদর্শ রক্ষিত হইয়া থাকে। সুন্দরীরূপে, সুশৃঙ্খলারূপে, সংহতরূপে, গভীররূপে ও সূক্ষ্মীরূপে ভাবপ্রকাশের অনুরোধে এ ভাষা যে কতক প্রাদেশিক অপভাষার মূল আদর্শ বলিয়া ধরিয়া লইতে হইবে। ་་སྣ༔ ༔ ,, প্রাচীন ভারতবর্ষে এইরূপ এক দিকে মাগধী ও অন্যদিকে শৌরসেনী মহারাষ্ট্ৰী এই দুই মূল প্রাকৃত ছিল। অদ্য ভারতবর্ষে যত আৰ্য ভাষা আছে তাহা এই দুই প্রাকৃতের শাখাপ্রশাখা। " এই দুই প্রাকৃতের মধ্যে মাগধীই প্রাচীনতর। এমন-কি হাির্নলে সাহেবের মতে এক সময়ে ভারতবর্ষে মাগধীই একমাত্র প্রাকৃত ভাষা ছিল। তাহা পশ্চিম হইতে ক্ৰমে পূর্বাভিমুখে পরিব্যাপ্ত হয়। শৌরসেনী আর একটি দ্বিতীয় ভাষাপ্রবাহ ভারতবর্ষে প্রকোশ করিয়া “পশ্চিমদেশ অধিকার