পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলা শব্দতত্ত্ব 8 পহিল বদরী কুচ পুন নবরঙ্গ। ] দিনে দিনে বাঢ়য়ে, পীড়য়ে অনঙ্গ। পৃ. ২২০ ৩-সংখ্যক পদে সম্পাদক, খেলত না খেলত লোক দেখি লাজ। হেরত না হেরত সহচরী মােঝ | পৃ. ৩ এই দুই চরণের অর্থ করিতেছেন : “খেলার সময় হউক বা না হউক লোক দেখিলে লজ্জিত হয় ও সহচরীগণের মধ্যে থাকিয়া একবার দৃষ্টি করে ও তখনি অপর দিকে দৃষ্টিক্ষেপ করে।” “খেলত না খেলত” এবং “হেরত না হেরত” উভয়ের একই রূপ অর্থ হওয়াই সংগত বোধ হয় ; উভয়ের বিভিন্ন অর্থ মনে লয় না। “খেলত না খেলত।” অর্থে সম্পাদক কহিতেছেন “খেলার সময় হউক বা না হউক” অর্থাৎ খেলে বা না খেলে, তাহা যদি হয় তবে “হেরত না হেরত।” শব্দের অর্থ “দেখে বা না দেখে৷” হওয়াই উচিত ; কিন্তু তাহা হইলে কোনো অর্থই হয় না। ইহার অর্থ নিম্নলিখিত রূপ হওয়াই উচিত ; “খেলে, খেলে না; লোক দেখিয়া লজ্জা হয়। সহচরীদের মধ্যে থাকিয়া দেখে, দেখে না।” অর্থাৎ খেলিতে খেলিতে খেলে না; দেখিতে দেখিতে দেখে না ; ইহাই ব্যাকরণ-সম্মত ও অর্থ-সংগতি । নয়ন নলিনী দাউ অঞ্জনে রঞ্জিত ভাঙবি ভঙ্গি-বিলাস। সং ৭, পৃ. ৮ সম্পাদক “ভাঙবি’ শব্দের অর্থ প্রকাশ করিতেছে।” লিখিয়াছেন। তিনি কহেন “ভাঙ ? বিভঙ্গি —বিলাস এই পাঠ সংগত বোধ হয় না।” ব্যাকরণ ধরিতে গেলে ‘ভাঙবি’ শব্দের অর্থ ‘প্রকাশ করিতেছে কোনোমতেই হয় না। ‘বি’ অন্ত ধাতু কোনোমতেই বর্তমান কাল-বাচক হইতে পারে না। বিদ্যাপতির সমস্ত পদাবলীর মধ্যে কোথাও এমনতর দেখা যায় না। ‘ভাঙবি” অর্থে ‘তুই প্রকাশ করিবি’ হয়, অথবা স্ত্রীলিঙ্গ কর্তা থাকিলে ‘সে প্রকাশ করিবে’ও হয়, কিন্তু বর্তমান কালবাচক ক্রিয়ায় ‘বি’ যোগ বিদ্যাপতির কোনো পদেই দৃষ্ট হয় না। এমন স্থলে “ভািঙ বিভঙ্গি বিলাস পাঠ কী কারণে অসংগত বুঝিতে পারা যায় না। রাধিকার নয়ন-নলিনীদ্বয় অঞ্জনে রঞ্জিত, এবং তাহার ক্ৰী বিভঙ্গি-বিলাস। অর্থাৎ বিভঙ্গিতেই তাহার ভ্রর বিলাস। এ অর্থ আমাদের নিকট বেশ সুসংগত বোধ হইতেছে। অলখিতে মােহে হেরি বিহসিতে থােরি। জনু বয়ান বিরাজ্যে চান্দ উজোরি। কুটিল কটাক্ষ ছটা পড়ি গেল। মধুকর ডম্বর অম্বর ভেল। সং ৯, পৃ. ১০ সম্পাদক শেষ দুই চরণের অর্থ এইরূপ করিয়াছেন : “কুটিল কটাক্ষের শোভায় চারি দিক এমন শোভিত হইল যেন মধুকর ডামরে (মৌমাছির বঁাকে) আকাশ (অম্বর) আচ্ছন্ন হইল।” "যেন” শব্দ কোথা হইতে পাইলেন, এবং “আচ্ছন্ন’ শব্দই বা কোথা হইতে জুটিল? আমরা ইহার এইরূপ অর্থ করি— ‘অলখিত ভাবে আমাকে দেখিয়া ঈষৎ হাস্য করাতে তাহার মুখ উজ্জ্বল চাদের ন্যায় বিরাজ করিতে লাগিল। মুখ যদি চাদ হইল, কটাক্ষ সে চাদের ছটা স্বরূপ হইয়া পতিত হইতে লাগিল এবং মধুকরের বঁােক সে চাদের অম্বর অর্থাৎ সুকাশ হইল। রাধাের মুখের ১ ভাঙা শব্দের অর্থ ভ্ৰা।