পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२88 রবীন্দ্র-রচনাবলী ভিড় করত। মাঝখানে ছিল পূর্বযুগের দীর্ণ ফাটলের রেখা নিয়ে শেওলায়-চিহ্নিত শান-বাধানে চানক । আর ছিল অযত্নে উপেক্ষিত অনেকখানি ফাকা জায়গা, নাম করবার যোগ্য অার-কোনো গাছের কথা মনে পড়ে না। এই তো আমার বাগান, এই ছিল আমার যথেষ্ট। এইখানে যেন ভাঙা-কান-ওয়ালা পাত্র থেকে আমি পেতুম পিপাসার জল। সে জল লুকিয়ে ঢেলে দ্বিত আমার ভিতরকার এক দরদী। বন্ড বা পেয়েছি তার চেয়ে রস পেয়েছি অনেক বেশি। আজ বুঝতে পারি এজন্তেই আমার আসা। আমি সাধু নই, সাধক নই, বিশ্বরচনার অমৃত-স্বাদের আমি যাচনদার, বার বার বলতে এসেছি "ভালো লাগল আমার’। বিকেলে ইস্কুল থেকে ফিরে এসে গাড়ি থেকে নামবামাত্র পুবের দিকে তাকিয়ে দেখেছি তেতলার ছাদের উপরকার আকাশে নিবিড় হয়ে ঘনিয়ে এসেছে ঘননীলবর্ণ মেঘের পুঞ্জ । মুহূর্তমাজে সেই মেঘপুঞ্জের চেয়ে ঘনতর বিস্ময় আমার মনে পুীভূত হয়ে উঠেছে। এক দিকে দূরে মেঘমেদুর আকাশ, অন্ত দিকে ভূতলে-নতুন-আসা বালকের মন বিশ্বয়ে আনন্দিত। এই আশ্চর্য মিল ঘটাবার প্রয়োজন ছিল, নইলে ছন্দ মেলে না । জগতে কাজ করবার লোকের ডাক পড়ে, চেয়ে দেখার লোকেরও আহবান আছে । আমার মধ্যে এই চেয়ে-দেখার ঔংস্থক্যকে নিত্য পূর্ণ করবার আবেগ আমি অনুভব করেছি। এ দেখা তো নিক্রিয় আলস্যপরতা নয়। এই দেখা এবং দেখানোর তালে তালেই কষ্টি । ঋগ বেদে একটি আশ্চর্য বচন আছে— অভ্রাতৃব্যে অনাত্বমনাপিরিন্দ্র জম্বুষা সনাদলি । যুধেদাপিত্ত্বমিচ্ছলে। হে ইন্দ্ৰ, তোমার শক্র নেই, তোমার নায়ক নেই, তোমার বন্ধু নেই, তবু প্রকাশ হবার কালে যোগের দ্বারা বন্ধুত্ব ইচ্ছা কর। যতবড়ো ক্ষমতাশালী হোন-না কেন সত্যভাবে প্রকাশ পেতে হলে বন্ধুতা চাই, আপনাকে ভালো লাগানো চাই । ভালো লাগাবার জন্ত নিখিল বিশ্বে তাই তো এত অসংখ্য আয়োজন । তাই তো শব্দের থেকে গান জাগছে, রেখার থেকে রূপের অপরূপতা । সে যে কী আশ্চর্য সে আমরা ভূলে থাকি । এ কথা বলব, স্বষ্টিতে আমার ডাক পড়েছে, এইখানেই, এই সংসারের অনাবশ্বক মহলে। ইন্দ্রের সঙ্গে আমি যোগ ঘটাতে এসেছি যে যোগ বন্ধুত্বের যোগ। জীবনের প্রয়োজন আছে অন্নে বস্ত্রে বাসস্থানে, প্রয়োজন নেই আনন্দরূপে অমৃতরূপে । সেইখানে জায়গা নেয় ইন্দ্রের সখারা। অস্তি সস্তং ন জহাতি অস্তি সস্তং ন পশুতি ।