পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

se». রবীন্দ্র-রচনাবলী কৌশল খেলিতেছেন। তিনি অত্যন্ত সাধু হইয়া প্রায় অশ্রনেত্রে সকলকে বলিলেন দাদাকে কি আমি খাওয়াপরার কষ্ট দিতে পারি? কিন্তু তিনি আমার ছেলেকে হাতে রাখিয়া এই-যে শয়তানি চাল চালিতেছেন ইহা আমি কোনোমতেই সহিব না। দেখি তিনি কতবড়ে চালাক । কথাটা বন্ধুপরম্পরায় জগমোহনের কানে যখন পৌছিল তখন তিনি একেবারে চমকিয়া উঠিলেন। এমন কথা যে উঠিতে পারে তাহা তিনি ভাবেন নাই বলিয়া নিজেকে নিবোধ বলিয়া ধিক্কার দিলেন। শচীশকে বলিলেন, গুডবাই শচীশ ! । শচীশ বুঝিল, যে বেদন হইতে জগমোহন এই বিদায়বাণী উচ্চারণ করিয়াছেন তার উপরে আর কথা চলিবে না। আজ আঠারো বৎসর আজন্মকালের নিরবচ্ছিন্ন ংস্রব হইতে শচীশকে বিদায় লইতে হইল। শচীশ যখন তার বাক্স ও বিছানা গাড়ির মাথায় চাপাইয়া দিয়া তার কাছ হইতে চলিয় গেল জগমোহন দরজা বন্ধ করিয়া তার ঘরের মধ্যে মেঝের উপর শুইয়া পড়িলেন। সন্ধ্যা হইয়া গেল, তার পুরাতন চাকর ঘরে আলো দিবার জন্য দরজায় ঘা দিল— তিনি সাড়া দিলেন না । হায় রে, প্রচুরতম মানুষের প্রভূততম মুখসাধন ! মানুষের সম্বন্ধে বিজ্ঞানের পরিমাপ যে খাটে না। মাথা গণনায় যে মানুষটি কেবল এক, হৃদয়ের মধ্যে সে যে সকল গণনার অতীত। শচীশকে কি এক দুই তিনের কোঠায় ফেলা যায় ? সে যে জগমোহনের বক্ষ বিদীর্ণ করিয়া সমস্ত জগৎকে অসীমতায় ছাইয়া ফেলিল । শচীশ কেন গাড়ি আনাইয়া তার উপরে আপনার জিনিস-পত্ৰ তুলিল জগমোহন তাহাকে সে কথা জিজ্ঞাসাও করিলেন না। বাড়ির যে বিভাগে তার বাপ থাকেন শচীশ সে দিকে গেল না, সে তার এক বন্ধুর মেসে গিয়া উঠিল। নিজের ছেলে যে কেমন করিয়া এমন পর হইয়া যাইতে পারে তাহা স্মরণ করিয়া হরিমোহন বারম্বার অশ্রুপাত করিতে লাগিলেন। র্তার হৃদয় অত্যন্ত কোমল ছিল। - বাড়ি ভাগ হইয়া যাইবার পর পুরন্দর জেদ করিয়া তাহদের অংশে ঠাকুর প্রতিষ্ঠা করাইল এবং সকালে সন্ধ্যায় শাখঘণ্টার আওয়াজে জগমোহনের কান ঝালাপালা হইয়৷ উঠতেছে ইহাই কল্পনা করিত এবং সে লাফাইতে থাকিত । শচীশ প্রাইভেট টুইশনি লইল এবং জগমোহন একটা এনট্রেন্স স্কুলের হেডমাস্টারি জোগাড় করিলেন। হরিমোহন এবং পুরন্দর এই নাস্তিক শিক্ষকের হাত হইতে ভদ্রঘরের ছেলেদিগকে বাচাইবার জন্য চেষ্টা করিতে লাগিলেন। i