পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

86 o I রবীন্দ্র-রচনাবলী 8 গেলাম লীলানন্দ স্বামীর খোজে । কত নদী পার হইলাম, মাঠ ভাঙিলাম, মুদির দোকানে রাত কাটাইলাম, অবশেষে এক গ্রামে গিয়া শচীশকে ধরিলাম । তখন বেলা দুটো হইবে । ইচ্ছা ছিল শচীশকে একলা পাই। কিন্তু জো কী ! যে শিষ্যবাড়িতে স্বামীজি আশ্রয় লইয়াছেন তার দাওয়া আঙিনা লোকে লোকারণ্য । সমস্ত সকাল কীর্তন হইয়া গেছে। যে-সব লোক দূর হইতে আসিয়াছে তাহদের আহারের জোগাড় চলিতেছে । አ আমাকে দেখিয়া শচীশ ছুটিয়া আসিয়া আমাকে বুকে চাপিয়া ধরিল। আমি অবাক হইলাম। শচীশ চিরদিন সংযত, তার স্তব্ধতার মধ্যে তার হৃদয়ের গভীরতার পরিচয় । আজ মনে হইল শচীশ নেশা করিয়াছে। স্বামীজি ঘরের মধ্যে বিশ্রাম করিতেছিলেন। দরজার একটা পাল্লা একটু খোলা ছিল। আমাকে দেখিতে পাইলেন । গম্ভীর কণ্ঠে ডাক দিলেন, শচীশ ! ব্যস্ত হইয়া শচীশ ঘরে গেল। স্বামীজি জিজ্ঞাসা করিলেন, ও কে ? শচীশ বলিল, শ্ৰীবিলাস, আমার বন্ধু। তখনই লোকসমাজে আমার নাম রটিতে শুরু হইয়াছিল । আমার ইংরেজি বক্তৃতা শুনিয়া কোনো একজন বিদ্বান ইংরেজ বলিয়াছিলেন, ও লোকটা এমন— থাক্, সে-সব কথা লিখিয়া অনর্থক শক্রবৃদ্ধি করিব না। আমি যে ধুরন্ধর নাস্তিক এবং ঘণ্টায় বিশ-পচিশ মাইল বেগে আশ্চর্য কায়দায় ইংরেজি বুলির চৌধুড়ি হাকাইয়। চলিতে পারি, এ কথা ছাত্রসমাজ হইতে শুরু করিয়া ছাত্রদের পিতৃসমাজ পর্যন্ত রাষ্ট্র হইয়াছিল। আমার বিশ্বাস, আমি আসিয়াছি জানিয়া স্বামীজি খুশি হইলেন । তিনি আমাকে দেখিতে চাহিলেন । ঘরে ঢুকিয়া একটা নমস্কার করিলাম ; সে নমস্কারে কেবলমাত্র দুইখানা হাত খাড়ার মতো আমার কপাল পর্যস্ত উঠিল, মাথা নিচু হইল না। আমরা জ্যাঠামশায়ের চেলা, আমাদের নমস্কার গুণহীন ধতুকের মতো নমো অংশটা ত্যাগ করিয়া বিষম খাড়া হইয়া উঠিয়াছিল। স্বামীজি সেটা লক্ষ্য করিলেন এবং শচীশকে বলিলেন, তামাকটা সাজিয়া দাও তে| হে শচীশ । து; শচীশ তামাক সাজিতে বসিল । তার টিকা যেমন ধরিতে লাগিল আমিও তেমনি জলিতে লাগিলাম। কোথায় যে বসি ভাবিয়া পাইলাম না। আসবাবের