পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

रान्नरकोछूक & ఏ কিন্তু জগতের এ নিয়ম কোনো কোনো জগদবাসীর পক্ষে যেমনই আনন্দজনক হউক আমাদের পক্ষে ঠিক তেমন সুবিধার বোধ হয় নাই । কেবল অগত্যা সহিয়াছিলাম, কিন্তু যেদিন আমাদের উপরে একটা কর্ম খালি হইল এবং বাহির হইতে একটা কাচা ইংরাজের ছেলেকে সেই কর্মে নিযুক্ত করিয়া আমাদের প্রমোশন বন্ধ করা হইল, সেদিন আমাদের ক্ষোভের আর সীমা রহিল না । ইচ্ছা হইল তখনই কাজ ফেলিয়া দিয়া চলিয়া যাই, একটা মিউটিনি করি, ইংরাজকে দেশ হইতে দূর করিয়া দিই, পালামেন্টে একটা দরখাস্ত করি, স্টেটসম্যান কাগজে একটা বেনামি পত্র লিখি । কিন্তু তাহার কোনোটা না করিয়া বাড়িতে চলিয়া গিয়া সেদিন আর জলখাবার খাইলাম না, খোকার সর্দি হইয়াছে বলিয়া স্ত্রীকে যৎপরোনাস্তি লাঞ্ছনা করিলাম, স্ত্রী র্কাদিতে লাগিল, আমি সকাল সকাল শুইয়া পড়িলাম। শুইয়া শুইয়া ভাবিতে লাগিলাম, হয় রে পয়সা, তোর জন্য এত অপমান ! 藝 স্ত্রী অভিমান করিয়া আমার কাছে আসিলেন না, কিন্তু নি:শব্দচরণে নিদ্রাদেবী আসিয়া উপস্থিত হইলেন। হঠাৎ কথন দেখিতে পাইলাম— আমি একটি পয়সা । কিছু আশ্চর্য বোধ হইল না। কবে কোন সনাতন টাকশাল হইতে বাহির হইয়াছি যেন মনেও নাই। এই পর্যন্ত অবগত আছি যে, ব্রহ্মার পা হইতে যেমন শূত্রের উৎপত্তি সেইরূপ টাকশালের অত্যন্ত নিম্নবিভাগেই আমাদের জন্ম । সেদিন সিকি দু-আনির একটা মহতী সভা বসিবে কাগজে এইরূপ একটা বিজ্ঞাপন পড়া গিয়াছিল। হাতে কাজ ছিল না, কৌতুহলবশত গড়াইয়া গড়াইয়া সেই সভায় গিয়া উপস্থিত হইলাম এবং দেয়ালের কাছে একটা কোণে আশ্রয় লইলাম । স্বকুমারী সহধর্মিণী দু-আনিকে সযত্বে বামপাশ্বে লইয়া শুভ্রকায় চার-আনিগুলি দলে দলে আসিয়া সভাগৃহ আচ্ছন্ন করিয়া ফেলিল। তাহারা বাস করে কেহ বা কোটের পকেটে, কেহ বা চামড়ার থলিতে, কেহ বা টিনের বাক্সে। কেহ কেহ বা অদৃষ্টগতিকে আমাদের প্রতিবেশীরূপে আমাদের পাড়ায় ট্যাকের মধ্যেও বদ্ধ হইয়। দিনযাপন করে । সেদিনকার আলোচনার বিষয়টা এই যে, আমরা পয়সার সহিত সর্বতোভাবে পৃথক হইতে চাহি, কারণ, উহারা বড়ই হীন । দু-আনির স্বতীক্ষ উচ্চস্বরে কহিল, এবং উহারা তাম্রবর্ণ ও উহাদের গন্ধ ভালো নহে । আমার পাশে একটি দু-আনি ছিল, সে ঈষৎ বাকিয়া বসিয়া নাসাগ্র কুঞ্চিত করিল, তাহার পাশ্ববর্তী চার-আনি আমার দিকে কটুমটু করিয়া তাকাইল, আমি তো একেবারে সংকোচে সিকিপয়সা হইয়া গেলাম। মনে মনে কহিলাম, আমাদেরই তো আটটা ষোলোটা হজম করিয়া