কথা কম বলে, কিন্তু গঞ্জিকা-মহিমায় তাহার সে মৌন-বাঁধ দ্রুত ভাঙিতে শুরু করিয়াছিল।
সে বলিয়া উঠিল, ভালরে ভাল, আমরা টাকা চাই, ও রক্তমাংসের জীবটিকে নিয়ে করব কি!
সর্দ্দার বলিল, খেয়ে ফেল্, গিলে ফেল্—
সর্দ্দারের রসিকতায় ভিখু কর্কশ কণ্ঠে হাসিয়া উঠিল। কিন্তু তাহার হাসি সম্পূর্ণ হইতে না হইতেই ভয়ে তাহার মুখের হাসি মুখে মিলাইল; আবার সেই চাপা আর্ত্তনাদ শ্রুত হইল; এবার যেন ঠিক ছাদের কাছ হইতে শব্দটা আসিতেছিল।
আতঙ্কিত সর্দ্দার চীৎকার করিয়া উঠিল, আবার!
ভিখু তখন ভয়বিমূঢ়, অপদেবতাদের কথা তাহার মনে ভিড় করিয়া আসিতেছিল। মাধবও অস্বস্তি অনুভব করিতেছিল, কিন্তু অন্য কারণে।
ভিখু ফিসফিস করিয়া বলিল, জায়গাটা অনেক দিন খালি পড়েছিল, কে জানে সেই সুযোগে তাঁরা সব এখানে ডেরা বেঁধেছেন কি না!
অধিকতর সাহসী সর্দ্দারের মনে যদিও অপদেবতাদের যথেষ্ট ভয় ছিল, তথাপি সে খানিকক্ষণ সে ভয়কে আমল দিল না। এই সকল দস্যুদের উপজীবিকাই এরূপ যে, তাহাদিগকে এমন নিঃসঙ্গ নির্জ্জন ভয়সঙ্কুল স্থানে সচরাচর চলাফেরা করিতে হয়—যেখানে গেলে সাধারণ লোকের নানাবিধ অপদেবতার ভয় জাগা স্বাভাবিক। তাহাদের অশিক্ষিত মনে ভয় যে থাকে না তাহা নয়, তবু অভ্যাসবশত তাহারা নিজেদের অনেকটা শক্ত করিয়া রাখে।
সর্দ্দার বলিল, হয়তো আশেপাশে কেউ লুকিয়ে আছে, আমি দেখছি। ভিখু, তুই বাবুর ওপর নজর রাখ্।
সর্দ্দার ধুতির খানিকটা অংশ ছিঁড়িয়া লইয়া সলিতার মত পাকাইয়া প্রদীপের তৈলে তাহা সিঞ্চিত করিয়া তাহাতে অগ্নিসংযোগ করিল এবং