এই অপরূপ দীপ হস্তে সাবধানে দরজা খুলিয়া বাহিরে আসিল। বারান্দার সমস্ত অন্ধিসন্ধি সে খুঁজিয়া দেখিল। পাশাপাশি তিনটি ঘর, মাঝেরটিতে মাধবকে ধরিয়া রাখা হইয়াছিল; এই তিনটি ঘরসংলগ্ন বারান্দাটা। বারান্দায় কিছু না দেখিতে পাইয়া সে প্রাচীরবেষ্টিত সামনের খোলা উঠানে নামিয়া খুঁজিতে লাগিল। কিন্তু ফলোদয় হইল না। সে বিরক্ত হইয়া সন্দিগ্ধভাবে পুনরায় কক্ষে প্রবেশ করিল। ভিখু এতক্ষণে সত্যসত্যই আতঙ্কিত হইয়াছিল। তাড়াতাড়ি সেই স্থান পরিত্যাগ করিবার বাসনায় সে সর্দ্দারের কনুইয়ে চিমটি কাটিয়া ইশারায় শীঘ্র কাজ সারিয়া লইতে বলিল।
সর্দ্দার বুঝিল, বলিল, দেরি হয়ে যাচ্ছে, এটা আমাদের ঘুমোবার জায়গা নয় মাধববাবু। আমাদের শর্ত্তে যদি রাজি হও, তোমাকে এখুনি ছেড়ে দি।
মাধব নিজের সুবিধাটা হৃদয়ঙ্গম করিল, তাচ্ছিল্য ভরে সে বলিল, কি শর্ত্ত?
—তোমার খুড়োর উইলটি আমাদের হাতে দাও।
বিশেষ না ভাবিয়া মাধব জবাব দিল, সেটা তো এখানে আমার কাছে নেই —মাধব আবার পায়চারি করিতে লাগিল।
সর্দ্দারও সংক্ষেপে বলিল, তা হ’লে এখানেই পচে ম’র, আমরা চাবি নিয়ে চললাম।
—আচ্ছা ধর, উইলটা আমি দিতেই চাই, এখানে থেকে দেওয়ার ব্যবস্থা করি কি ক’রে?
দস্যু এবার নিজের সুযোগ বুঝিল, বলিল, সে ব্যবস্থা তুমিই করবে। একটা মতলব ঠিক ক’রে ফেল। তোমার অবস্থায় পড়লে আমি, যারা আমাকে বন্দী করেছে, তাদেরই কারু হাতে বাড়িতে চিঠি লিখে পাঠাতাম, তার হাতে উইল পাঠিয়ে দিতে বলতাম।