রাঁধুনির অপরাধ সে পিতলের পাত্রগুলিকে যথাযোগ্য ব্যবহার করিয়াছে এবং সেইজন্যই তো এত খাটিতে হইতেছে। রন্ধনকারিণী স্বয়ং তখন এই দৃশ্য় হইতে কিছু দূরে একজন বর্ষিয়সী রমণী, সম্ভবত বাড়ির কর্ত্রী অথবা গৃহিণীর, সহিত রাত্রির রান্নার ঘিয়ের পরিমাণ বিষয়ক অত্যন্ত মনোহারী প্রসঙ্গে একটু উত্তপ্ত হইয়া লিপ্ত ছিল বলিয়া বাসনমাজা ঝি তাহার ঐহিক ও পারত্রিক জীবন সম্বন্ধে যে ভয়াবহ আলোচনা করিতেছিল তাহা শুনিতে পাইতেছিল না। অন্নব্যঞ্জনপ্রস্তুতকারিণী সাধ্বী প্রয়োজনের ঠিক দ্বিগুণ ঘি মাত্র চাহিতেছিল, কারণ নিজের ব্যবহারের জন্য খানিকটা ঘি গোপনে না সরাইলে চলিবে কেন! অন্য কোণে রাত্রির আহারের ব্যবস্থা যে লোভনীয়ই হইয়াছে, তাহার প্রমাণস্বরূপ অতি মধুর ঘসঘস শব্দ সহযোগে বঁটিতে মাছ কোটা হইয়া পূর্ব্বোক্ত ধার্ম্মিকা রন্ধনকারিণীর দুঃখের কারণ ঘটাইতেছিল। দালান ও বারান্দায় এদিকে ওদিকে মলিন মৃত্তিকা-প্রদীপ জ্বালাইয়া ছোট ছোট হাতে ধরিয়া কয়েকটি মনোহর মূর্ত্তি নিঃশব্দে না হইলেও মধুর ঝঙ্কার তুলিয়া দ্রুত যাতায়াত করিতেছিল; রূপার মলের রুনুঝুনু আওয়াজ এবং ক্কচিৎ বা ততোধিক মধুর কণ্ঠে তাহাদের পরস্পরকে আহ্বানের শব্দ কানে আসিতেছিল। সম্পূর্ণ উলঙ্গ এক জোড়া শিশু এই অবসরে নিজেদের বীরত্ব প্রমাণ করার জন্য পরস্পরের চুল টানিয়া ছিঁড়িবার ব্যর্থ প্রয়াস করিতেছিল। এই সমস্ত আবর্জ্জনার মধ্যে তাহাদিগকে বেমানান ঠেকিতেছিল না। ছাদের এক কোণে বসিয়া একদল বালিকা সশব্দে আগডুম বাগডুম খেলায় মত্ত ছিল।
মাধব ক্ষণকাল হতাশভাবে দাঁড়াইয়া রহিল—এই প্রচণ্ড কলকোলাহলের মধ্যে তাহার কথা শুনিবে কে?
শেষে যখন অসহ্য হইল, গলাটা যতদূর সম্ভব চড়াইয়া সে বলিল, আরে এই মাগীরা, তোরা থাম্ দেখি, একটা কথা বলতে দে।