বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:রাজমোহনের স্ত্রী.djvu/৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৮
রাজমোহনের স্ত্রী

 পরক্ষণেই একটু উচ্চকণ্ঠে উপস্থিত স্ত্রীলোকদের একজনকে সম্বোধন করিয়া মাধব কহিল, বড়বাড়িতে গিয়ে দেখ, সেখানে যদি খুড়ীমা থাকেন, তাকে এখনই আসতে বল। যদি তিনি আসতে না চান, তারও কারণ জেনে এস।


ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ

মুদিতচক্ষু ব্যক্তি মাত্রই নিদ্রিত নয়; প্রস্তর-প্রাচীরের

মত মৃত্তিকা-প্রাচীরেরও কান থাকে।

 আসুন পাঠক, আমরা মাতঙ্গিনীর নিকট ফিরিয়া যাই। স্বামী কর্তৃক কঠোরভাবে লাঞ্জিত হইবার পর সেই যে তাহার পিসশাশুড়ী তাহাকে তাহার শয়ন-কক্ষে টানিয়া আনিয়াছিলেন, তখন পর্য্যন্ত সে বাহিরে আসে নাই। দ্বার রুদ্ধ করিয়া আপনার যন্ত্রণায় মুহ্যমান হইয়া সে পড়িয়া ছিল। বৃদ্ধা যথাসময়ে নৈশ আহার প্রস্তুত করিয়াছিলেন, কিন্তু তাঁহার এবং ননদী কিশোরীর সকল অনুরোধ-উপরোধই ব্যর্থ হইয়াছিল, সে বাহিরে আসিয়া খাইতে বসে নাই। তাঁহারা শেষে হাল ছাড়িয়া দিয়া নিজের দুশ্চিন্তা লইয়া তাহাকে পড়িয়া থাকিতে দিয়াছিলেন।

 শয্যায় শুইয়া শুইয়া মাতঙ্গিনী ভাবিতেছিল, এই ভাবেই তাহাকে সারা-জীবন দুঃখ-যন্ত্রণা ভোগ করিতে হইবে। সে জানিত তাহার স্বামী সে রাত্রে আর তাহার সহিত দেখা করিবে না; তাহার প্রতি কুপিত হইলে এরূপ করাই তাহার স্বভাব। ইহাতে সে কতকটা খুশিই ছিল, কারণ একা থাকিতে পাইলে সে নিজের ভাবনা চিন্তা লইয়া নিরুপদ্রবে থাকিবে।

 রাত্রি গভীর হইলে বাটীর সকলে একে একে শয়ন করিতে গেল।