বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:রাজমোহনের স্ত্রী.djvu/৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮২
রাজমোহনের স্ত্রী

অন্দর-মহলের দ্বিতলে গমন করি। সিঁড়ি অত্যন্ত অপ্রশস্ত এবং অন্ধকার; নিরেট ইটের স্তুপ ধাপে ধাপে উপর পর্য্যন্ত গিয়াছে। আমরা পাঠককে দুর্গম ও দুরতিক্রম্য আর এক রাজ্যে যাইতে আহ্বান করিতেছি—স্বয়ং মথুর ঘোষের শয়ন-কক্ষে তাঁহাকে যাইতে হইবে। এই কক্ষের প্রাচীরগাত্রের পালিস-করা চুনবালির আবরণ যথাসম্ভব পরিষ্কার আছে, দুই-এক স্থলে যে ইহার পবিত্রতা বিনষ্ট হয় নাই তাহা নহে; এখানে ওখানে দুই-একটা কলঙ্কের দাগ, ক্কচিৎ দুই-একটা আঁচড়ও দেখা যাইতেছে। এই কক্ষের এক দিকের একটা কোণ ঘেঁষিয়া অনাবৃত মেঝের উপরে সেগুনকাঠের একটা ভারী এবং উঁচু খাট দাঁড়াইয়া আছে। কাষ্ঠনির্ম্মিত ফ্রেমটির সহিত সামঞ্জস্যবিহীন ভাবে একটা ডোরাকাটা জালি-পরদা চারিপাশে মাটির উপর পর্য্যন্ত ঝুলিতেছে। কাঠের কয়েকখানা বিপুলকায় আলমারি এবং চেস্ট-অব-ড্রয়ার্সও ছিল; কালের প্রকোপে ও অযত্নব্যবহারে সেগুলির বার্নিশ বিশেষভাবে ক্ষয়প্রাপ্ত হইয়াছে। এগুলি ঠিক পালঙ্কটির বিপরীত দিকে দেয়াল ঘেঁষিয়া বিরাজ করিতেছিল। একটি কি দুইটি ড্রয়ারসমন্বিত লিখিবার টেবিল, কয়েকটি অতি সাধারণ গ্রাম্য বাক্স ও সিন্ধুক, তাহাদের ডালার চারিটা ধার মোটা মোটা পিতলের পাত দিয়া মোড়া এবং মধ্যে মধ্যে চন্দনকাঠের টুকরা বসানো—ইহাই হইল সেই কক্ষটির কাঠের আসবাবের সম্পূর্ণ পরিচয়। বিপরীত দুই দেওয়ালের মাথা হইতে পরস্পর মুখামুখি ভাবে দুইটি সুবৃহৎ চিত্র ঝুলিতেছিল—একটি মা কালীর কালো মূর্ত্তি এবং অন্যটি মা দুর্গার ছবি, দূর হইতে দেখিলে এটি কাঁকড়ার ছবির মত বোধ হয়।

 অন্য দুই বিপরীত প্রাচীরগাত্রে করালবদনী কালী ও ভগবতী দুর্গার মত অত উঁঁচুতে নয়, দেওয়ালের মাঝামাঝি সারি সারি ইউরোপীয় শিল্পকলার কয়েকটি নমুনা রক্ষিত ছিল। কুমারী মাতা মেরী ও তাঁহার শিশু সম্পর্কিত অপরূপ শিল্প যে-কক্ষের শোভা বর্দ্ধন করিতেছিল তাহার অধিবাসীরা