পাতা:রাজা প্রজা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পথ ও পাথেয় । 〉*。 বাধিয়া তুলিবার একটা স্বাভাবিক প্রবৃত্তি যাহাঁদের মধ্যে সজীবভাবে বিদ্যমান, ভাঙনের আঘাত তাহাদের সেই জীবনধৰ্ম্মকেই তাহাম্বের সৃজনীশক্তিকেই সচেষ্ট সচেতন করিয়া তোলে। এইরূপে সৃষ্টিকেই নূতন বলে উত্তেজিত করে বলিয়াই প্রলয়ের গৌরব । নতুবা শুদ্ধমাত্র ভাঙন, নির্বিচার বিপ্লব, কোনমতেই কল্যাণকর হইতে পারে না । পালে খুব দমকা হাওয়া লাগিতেই যে জাহাজ জড়ত্ব দূর করিয়া হুহু কবিয়া চলিয়া গেল নিশ্চয় বুঝিতে হইবে আর কিছু না হউক সে জাহাজের খোলের তক্তাগুলার মধ্যে র্যাক ছিল না ; যদি বা পুৰ্ব্বে ছিল এমন হয় তবে নিশ্চয়ই কোনো এক সময়ে জাহাজের মিস্ত্রি খোলের অন্ধকারে অলক্ষ্যে বসিয়া সে গুলা সারিয়া দিয়াছিল । কিন্তু যে জীর্ণ জাহাজকে একটু নাড়া দিলেই তাহার একটা আল্লা তক্তার উপরে আর একটা আল্লা তক্তা ঠকঠক করিয়া আঘাত করিতে থাকে ঐ দ্বমৃক হাওয়া কি তাহার পালের পক্ষে সৰ্ব্বনেশে জিনিষ নয় ? আমাদের দেশেও একটুমাত্র নাড়া থাইলেই হিন্দুতে মুসলমানে, উচ্চবর্ণে নিম্নবর্ণে সংঘাত বাধিয়া যায় না কি ? ভিতরে যখন এমন সব ফঁাক তথন ঝড় কাটাইয়া ঢেউ বঁাচাইয়া স্বরাজের বন্দরে পৌছিবার জন্ত কি কেবল উত্তেজনাকে উন্মাদনায় পরিণত করাই পরিত্রাণের প্রশস্ত উপায় ? বাহির হইতে দেশ যখন অপমান লাভ করে, যখন আমাদের অধিকারকে বিস্তীর্ণ করিবার ইচ্ছা করিলেই কর্তৃপক্ষদের নিকট হইতে অযোগ্যতার অপবাদ প্রাপ্ত হইতে থাকি তখন আমাদের দেশের কোন দুৰ্ব্বলতা কোন ক্রটি স্বীকার করা আমাদের পক্ষে অত্যস্ত কঠিন হইয়া উঠে। তখন যে আমরা কেবল পরের কাছে মুখরক্ষা করিবার জন্তই গরিমা প্রকাশ করি তাহা নহে, আহত অভিমানে নিজের অবস্থা সম্বন্ধে আমাদের বুদ্ধিও অন্ধ হইয়া যায় ; আমরা যে অবজ্ঞার যোগ্য নহি তাহ চক্ষের পলকেই প্রমাণ করিয়া দিবার জন্ত আমরা একান্ত