পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/১৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

23 ఆ রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র বাধ্য হইবে, তাহা হইলেই মনুষ্যজাতির ভবিষ্যতের জন্য আশা করিতে পারা যায়। অনেক হিসাব-নিকাশ জমাখরচ বিচারের পর কৰ্ত্তব্য নির্ণয় একরূপ ব্যাপার ; আর আপনার স্বাভাবিক প্রবৃত্তি কর্তৃক প্রণোদিত ও তাড়িত হইয়া কৰ্ত্তব্যের দিকে ধাবিত হওয়া আর এক রকম ব্যাপার। এই শেষোক্ত স্থলে কৰ্ত্তব্য কৰ্ম্মে প্রবৃত্তিটা স্বভাবের সহিত এমন ভাবে মিশিয়া যায় যে, উহাকে স্বভাব হইতে আর পৃথকৃ করিয়া লওয়া চলে না ; পৃথক করিতে গেলে সমগ্র স্বভাবটাই ভাঙ্গিয়া যায়। সমাজের বর্তমান অবস্থায় সাধারণতঃ মাচুষে পরের কাজ করে ; কেন না, পরের কাজটা ভাল কাজ ও প্রশংসনীয় কাজ ; উহাতে নিজেরও লাভ আছে, সমাজেরও লাভ আছে। ইহলোকে, এবং হয়ত ইহলোকের পর আর একটা ষে লোক আছে শুনা যায, সেইখানে এই কাজের জন্য বিশেষ প্রতিপত্তি লাভের সম্ভাবনা রহিয়াছে। কিন্তু মানুষ যেমন ক্ষুধার উত্তেজনায় খাইতে চায়, পিপাসার উত্তেজনায় জলাথী হয় , শারীরবিজ্ঞানুঘটিত কোন তত্ত্ব তখন তাহার মনে স্থান পায় না , এমন কি, ক্ষুধার ও পিপাসার তাড়নায় এমন খাদ্য ও এমন পানীয় সে উদরস্থ করিয়া ফেলে, শারীরবিজ্ঞান তাহাতে একেবারে স্তম্ভিত হইয়া পড়ে। সেইরূপ পরার্থপরতা তখনই স্বাভাবিক প্রকৃতির মধ্যে স্থান পাইবে, যখন মনুষ্য সেই প্রবৃত্তির তাড়নায় স্বার্থ ছাড়িয়া পরার্থের মুখে আপনা হইতে ধাবিত হইবে। তাহার এই কার্য্যের দ্বারা সমাজের মঙ্গল হইবে, কি অমঙ্গল হইবে, তাহা চিন্তা করিতে সে সময় পাইবে না। মনুষের ইতিহাসে যদি কখন এইরূপ দিন আইসে, যখন মন্তয্যের প্রবৃত্তি এইরূপে মনুষ্যকে পরের কাজে প্রেরিত করিবে, তখন হয়ত রাজশাসন ও সমাজশাসনের প্রয়োজন হইবেক না ; তখন নীতিপ্রচারক ও ধৰ্ম্মপ্রচারকের পরিশ্রমের প্রয়োজন হইবে না ; এবং কারাগার ও গির্জাঘবের ভগ্নাবশেষ চিত্রশালিকায় একত্র রক্ষিত হইয়া মনুষের অতীত ইতিহাসের পরিচ্ছেদবিশেষের সাক্ষ্য দিবে। মনুষ্যের ইতিহাসে এমন দিন আসিবে কি না জানি না ; কিন্তু মতুন্যের এই পরম ধৰ্ম্মের কল্পনা অন্ততঃ একটা দেশের মানবমস্তিষ্কে প্রতিফলিত হইয়াছিল। যে দেশের সর্বপ্রধান মহাকাব্যের নায়ক ভগবান রামচন্দ্র এই নিষ্কাম ' ধৰ্ম্মপ্রবৃত্তির প্ররোচনায় আপনার প্রাণসম ধৰ্ম্মপত্নীকে কৰ্ত্তব্যবোধে নিৰ্ব্বাসিত করিয়াছিলেন, যে দেশের সর্বপ্রধান ধৰ্ম্মপ্রচারক ভগবান সিদ্ধার্থ সংসারের দুঃখ-যাতনা হইতে মানবমণ্ডলীর পরিত্রাণার্থ রাজ্য-সম্পত্তি পরিত্যাগ না করিয়া পারেন নাই, ষে দেশের উপাস্য মানবদেব শ্ৰীকৃষ্ণ এই নিষ্কাম ধর্মের প্রচারকর্তা বলিয়া ইতিহাসে কীৰ্ত্তিত, সেই দেশে এই ফলাকাঙ্ক্ষাবজিত প্রবৃত্তির ঐতিহাসিক উদাহরণও নিতান্ত বিরল হইবার সম্ভাবনা নাই। এই স্থলে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সহিত আমাদিগের সম্বন্ধ। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সহিত বর্তমান যুগের বঙ্গ-সস্তানগণের অধিক সাদৃপ্ত না থাকিতে পারে ; কিন্তু সেই চরিত্র যে আমরা আদৌ দেখিতে পাই, তাহা সম্ভবে। কঠোরতার সহিত কোমলতার সমাবেশ ব্যতীত মনুষ্য-চরিত্র সম্পূর্ণতা পায় না। ভারতবর্ষীয় মহাকবির কল্পনায় পূর্ণ মনুষ্যত্ব বঞ্জের ন্যায় কঠোর ও কুমের ন্যায় কোমল ; যুগপৎ ভীম ও কান্ত, জধৃধ্য এবং অভিগম্য। রামায়ণ এবং উত্তরচরিত অবলম্বন করিয়া বিদ্যাসাগর সীতার বনবাস রচনা করিা