পাতা:রিক্তের বেদন - কাজী নজরুল ইসলাম.pdf/২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
রিক্তের বেদন্

 সমস্ত শাল আর পিয়াল বন কাঁপিয়ে যেন একটা পুত্রশোকাতুরা দ্বৈত্য-জননী ডুক্‌রে’ ডুক্‌রে’ কাঁদ্‌ছে—‘ঔ—ঔ—ঔ!’ আর মাতৃহারা দৈত্যশিশুর মত এই ক্ষ্যাপা গাড়ীটাও এপারে থেকে কাৎরে’ কাৎরে’ উঠচে,—উ—উ—উঃ।’


(গ)

নৌশেরা।—

 এস আমার বোবা সাথী, এস! আজ কতদিন পরে তোমায় আমায় দেখা! তোমার বুকে এম্‌নি করে’ আমার প্রাণের বোঝা নামিয়ে না রাখ্‌তে পার্‌লে এতদিন আমার ঘাড় দুম্‌ড়ে পড়্‌ত!···

 আহ্, কি জ্বালা! এত হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম, এত গাধাখাটুনির মাঝেও সেই একান্ত অন্ধস্মৃতিটার ব্যথা যেন বুকের উপর চেপে’ বসে আছে!······আজ তাকে ঝেড়ে ফেল্‌তে হবে! হৃদয়, শক্ত হও—বাঁধন ছিঁড়্‌তে হবে! যে তোমার কখনো হয়নি, যাকে কখ্‌খনো পাওনি,—যে তোমার হয়ত কখ্‌খনো হবেনা, যাকে কখ্‌খনো পাবেনা,—যা’র অজানা-ভালোবাসার স্মৃতিটাই ছিল—তোমার সারা বক্ষ বেদনায় ভরে,’ সেই শহিদার স্মৃতিটাকেও ধুয়ে মুছে ফেল্‌তে হবে! উঃ!······তা’ পারবে? সাহস আছে? “না” বল্‌লে চল্‌বে না, এ যে পার্‌তেই হবে! মনে পড়ে কি আমাদের দেশের মা-ভাই-বোনের দেওয়া উপহার? বুঝেছিলে কি যে, ও গুলি তাঁদের দেওয়া দায়িত্বের, কর্ত্তব্যের গুরুভার?

১৫