পাতা:রিক্তের বেদন - কাজী নজরুল ইসলাম.pdf/২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
রিক্তের বেদন্

আমাদের কাজের উপর আমাদের জাতির ভবিষ্যৎ নির্ভর কর্‌ছে। কষ্টিপাথরের মত সহ্যগুণ আমাদের থাকা চাই, তবে না জগতের লোকে যাচাই করে’ নেবে যে, বাঙ্গালীরাও বীরের জাতি। এ সময় একটা গোপন স্মৃতি-ব্যথা বুকে পুষে’ মুস্‌ড়ে’ পড়্‌লে চল্‌বে না। তাকে চাপা দিতেও পার্‌বে না, নিঃশেষে বিসর্জ্জন দিতে হবে! একেবারে বাইরের ভিতরের সব কিছু উজাড় করে’ বিলিয়ে দিতে হবে, তবে না রিক্ততার—বিজয়ের পূর্ণরূপ ফুটে’ উঠবে প্রাণে। অনেকে জীবন দিয়েছে, তবু এই প্রাণপণে-আঁকড়ে-ধরে’-থাকা মধু-স্মৃতি-টুকু বিসর্জ্জন দিতে পারেনি। তোমাকে সেই অসাধ্য সাধন কর্‌তে হবে! পার্‌বে? সাধনার সে জোর আছে?—যদি না পার, তবে কেন নিজকে ‘মুক্ত,’ ‘রিক্ত,’ ‘বীর’ বলে’ চেঁচিয়ে আকাশ কাটাচ্ছ? যার প্রাণের গোপনতলে এখনও কামনা জেগে রয়েছে, সে ভোগী-মিথ্যুক আবার ত্যাগের দাবী করে কোন্ লজ্জায়? সে কাপুরুষের আবার বীরের পবিত্র শিরস্ত্রাণের অবমাননা কর্‌বার কি অধিকার আছে? দেশের জন্য প্রাণ দিবে যারা, তারা প্রথমে হবে ব্রহ্মচারী, ইন্দ্রিয়জিৎ!—

 মাথার ওপর মা আমার ভাবী-বিজয়ী বীর-সন্তানের মুখের দিকে আশা উৎসুক নয়নে চেয়ে রয়েছেন, আর পায়ের নীচে এক তরুণী তার অশ্রুমিনতি ভরা ভাষায় সাধছে, “যেয়োনাগো প্রিয়, যেয়োনা।”— কি করবে?—······নিশ্চয়ই পার্‌বে! তুমি যে মায়ামমতাহীন কঠোর সৈনিক।······