তিনি যথাযোগ্য দণ্ড দিতে পারেন নাই। পিয়ারসন ও মর্টন কয়েক জন সহকারীর সহিত ষড়যন্ত্র করিয়া আমাকে সর্বস্বান্ত করিয়াছে, তোমাকে পথে বসাইয়াছে। আমার দিন ত ফুরাইয়া আসিয়াছে, কিন্তু তুমি কোথায় আশ্রয় গাইবে, তোমার কি উপায় হইবে, এই চিন্তাতে মরণেও শান্তি পাইব না।”
মিসেস্ কার্টার আবার নীরব হইলেন; অন্তিম হিক্কায় তাঁহার দেহ কম্পিত হইল। তাহার পর সব নিস্তব্ধ। প্রাণ-বিহঙ্গ তাঁহার দেহ পিঞ্জর ত্যাগ করিল।
জননী কথা কহিতে কহিতে প্রাণত্যাগ করিয়াছেন আমেলিয়া ইহা বুঝিতে পারিলেন না। তিনি তাড়াতাড়ী উঠিয়া তাঁহার মস্তকে হাত দিলেন, এবং মায়ের মূর্চ্ছা। হইয়াছে ভাবিয়া তাঁহার চেতনা সম্পাদনের চেষ্টা করিতে লাগিলেন; কিন্তু বৃথা চেষ্টা! তাঁহার বক্ষঃস্থলে হাত দিয়া দেখিলেন, বক্ষের স্পন্দন থামিয়া গিয়াছে!—তখন আমেলিয়া বুঝিতে পারিলেন, মা জন্মের মত তাঁহাকে ছাড়িয়া গিয়াছেন।
আমেলিয়া মাতার মৃত দেহের নিকট হইতে উঠিয়া স্খলিত পদে সেই কক্ষ পরিত্যাগ করিলেন, এবং পিয়ারসন ও মর্টন যে কক্ষে বসিয়াছিল, সেই কক্ষে উপস্থিত হইলেন। আমেলিয়ার নয়নে অশ্রু ছিল না, আকর্ণবিশ্রান্ত বিস্ফারিত নেত্র হইতে অগ্নি-ফুলিঙ্গ নির্গত হইতেছিল, ঘৃণা ও ক্রোধে তাঁহার সুন্দর মুখ লোহিতাভ হইয়াছিল, তাঁহার ঘন ঘন দীর্ঘশ্বাস বহিতেছিল, এবং সুগঠিত সমুন্নত দেহ থর থর করিয়া কাঁপিতেছিল। পিয়ারসন ও মর্টন আমেলিয়ার রণচণ্ডীর ন্যায় মূর্ত্তি দেখিয়া সবিস্ময়ে তাঁহার মুখের দিকে চাহিয়া রহিল, তাহাদের মুখে কথা ফুটিল না।
আমেলিয়া প্রায় এক মিনিটকাল নীরবে দণ্ডায়মান থাকিয়া