পাতা:রোকেয়া রচনাবলী.pdf/৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৪ রোকেয়া রচনাবলী

 এখন কৃষিকার্যের কথা বলি। কৃষি দ্বারা অন্নবৃদ্ধি হইতে পারে। কিন্তু আমরা ভাবিয়া, দেখিয়াছি কৃষিবিভাগের কার্য্য (Agriculture} করা অপেক্ষা মস্তিষ্ক উর্বর (Brain culture) “করা সহজ। অর্থাৎ কর্কশ উর্বর ভূমি কর্ষণ করিয়া ধান্য উৎপাদন করা অপেক্ষা মুখস্থ বিদ্যার জোরে অর্থ উৎপাদন করা সহজ। এবং কৃষিকার্য্যে পারদর্শিতা প্রদর্শন করা অপেক্ষা। কেবল M.R.A.C. পাশ করা সহজ! আইনচর্চা করা অপেক্ষা কৃষি বিষয়ে জ্ঞানচর্চা করা কঠিন। অথবা রৌদ্রের সময় দু হস্তে কৃষিক্ষেত্র পরিদর্শন জন্য ইতস্ততঃ ভ্রমণ করা অপেক্ষা টানাপাখার তলে আরাম কেদারায় বসিয়া দুর্ভিক্ষ সমাচার (Famine Report) পাঠ করা সহজ। তাই আমরা অন্নোৎপাদনের চেষ্টা না করিয়া অর্থ উৎপাদনে সচেষ্ট আছি। আমাদের অর্থের অভাব নাই, সুতরাং অন্নকষ্টও হইবে না! দরিদ্র হতভাগা সব অন্নাভাবে মরে মরুক, তাতে আমাদের কি?

 আমরা আরও অনেক প্রকার সহজ কার্য্য নিৰ্বাহ করিয়া থাকি। যথা:

 (১) রাজ্য স্থাপন করা অপেক্ষা “রাজা” উপাধি লাভ সহজ।

 (২) শিল্পকার্যে পারদর্শী হওয়া অপেক্ষা B. Sc. ও D. Sc. পাশ করা সহজ।

 (৩) অল্প বিস্তর অর্থব্যয়ে দেশে কোন মহৎ কার্য্য দ্বারা খ্যাতি লাভ করা অপেক্ষা “খাঁ বাহাদুর” বা “রায় বাহাদুর” উপাধিলাভের জন্য অর্থ ব্যয় করা সহজ।

 (৪) প্রতিবেশী দরিদ্রদের শােক দুঃখে ব্যথিত হওয়া অপেক্ষা বিদেশীয় বড় লােকদের মৃত্যুদুঃখে “শােক সভার সভ্য হওয়া সহজ।

 (৫) দেশের দুর্ভিক্ষ নিবারণের জন্য পরিশ্রম করা অপেক্ষা আমেরিকার নিকট ভিক্ষা গ্রহণ করা সহজ।

 (৬)স্বাস্থ্যরক্ষায় যত্নবান হওয়া অপেক্ষা স্বাস্থ্য নষ্ট করিয়া ঔষধ ও ডাক্তারের হস্তে জীবন সমর্পণ করা সহজ।

 (৭) স্বাস্থ্যের উন্নতি দ্বারা মুখশ্রীর প্রফুল্লতা ও সৌন্দর্য বর্ধন করা (অর্থাৎ healthy & cheerful হওয়া অপেক্ষা (শুষ্কগণ্ডে!) কালিডাের, মিল্ক অভ রােজ ও ভিনােলিয়া পাউডার (Kalydore, milk of rose ও Vinolia powder) মাখিয়া সুন্দর হইতে চেষ্টা করা সহজ।

 (৮) কাহারও নিকট প্রহারলাভ করিয়া তৎক্ষণাৎ বাহু বলে প্রতিশােধ লওয়া অপেক্ষা মানহানির মােকদ্দমা করা সহজ ইত্যাদি।

 তারপর আমরা মূর্ত্তিমান আলস্য—আমাদের গৃহিণীগণ এ বিষয়ে অগ্রণী। কেহ কেহ শ্রীমতীদিগকে স্বহস্তে রন্ধন করিতে অনুরােধ করিয়া থাকেন। কিন্তু বলি, আমরা যদি রৌদ্রতাপ সহ্য করিতে না পারি, তবে আমাদের শ্রদ্ধাঙ্গীগণ কিরূপে অগ্নির উত্তাপ সহিবেন? আমরা কোমলাঙ্গ—তাহারা কোমলাঙ্গী; আমরা পাঠক, তাহারা পাঠিকা; আমরা লেখক, তাহারা লেখিকা। অতএব আমরা পাচক না হইলে তাহারা পাচিকা হইবেন কেন? সুতরাং যে লক্ষ্মীছাড়া দিব্যাঙ্গনাদিগকে রন্ধন করিতে বলে, তাহার ত্রিবিধ দণ্ড হওয়া উচিত। যথা তাহাকে (১) তুষানলে দগ্ধ কর, অতঃপর (২) জবেহ কর, তারপর (৩) ফাসী দাও!!