পাতা:রোকেয়া রচনাবলী.pdf/৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৬ রোকেয়া রচনাবলী
৩৬

দ্রব্য যথাবিধি রন্ধন না হইলে কিম্বা সর্ব্বদা একই প্রকার খাদ্য এবং অখাদ্য ভোজন করিলে শরীর দুর্বল এবং নানা রোগের আধার হইয়া পড়ে)।

 সুতরাং রন্ধনপ্রণালীর সঙ্গে সঙ্গেই গৃহিণীর ডাক্তারী ও (Chemistry) রসায়ন বিষয়ক সাধারণ জ্ঞান আবশ্যক। কোন্ খাদ্যের কি গুণ, কোন বস্তু কত সময়ে পরিপাক হয়, কোন ব্যক্তির নিমিত্ত কিরূপ আহার্য্য প্রয়োজন, এসব বিষয়ে গৃহিণীর জ্ঞান চাই। যদি আহারই যথাবিধি না হয়, তবে শরীরের পুষ্টি হইবে কিসের দ্বার? অযোগ্য ধাত্রীর হস্তে কেহ সন্তান পালনের ভার দেয় না, তদ্রপ অযোগ্যা রাধুনীর হাতে খাদ্য দ্রব্যের ভার দেওয়া কি কর্তব্য? রন্ধনশালার চতুর্দিকে কাদা হইলে সেই স্থান হইতে সতত দূষিত বাষ্প উঠিতে থাকে; বাড়ীর লোকেরা দুগ্ধ এবং অন্যান্য খাদ্যের সহিত ঐ বাষ্প আত্মসাৎ করে। কেবল আহারের স্থান পরিষ্কৃত হইলেই চলিবে না; যে স্থানে আহার করা হয় সে জায়গার বায়ু (Atmosphere) পর্যন্ত যাহাতে পরিষ্কৃত থাকে, গৃহিণী সে বিষয়ে দৃষ্টি রাখিবেন।

 অনেকে শাকসবজী খাইতে ভালবাসেন। বাজারের তরকারী অপেক্ষা গৃহজাত তরকারী অবশ্য ভাল হয়। গৃহিণী প্রায়ই শিম, লাউ, শশা, কুম্মাণ্ড স্বহস্তে বপন করিয়া থাকেন। যদি তাহারা উদ্যান প্রস্তুত প্রণালী (Horticulture) অবগত থাকেন, তবে ঐ লাউ কুমড়ার কি সমধিক উন্নতি হইবে না? অন্ততঃ কোন্ স্থানের মাটী কিরূপ, কোথায় শশা ভাল ফলিবে, কোথায় লঙ্কা ভাল হইবে, গৃহিণীর এ জ্ঞানটুকু ত থাকা চাই।

 অনেকেই ছাগল, কুক্কুট, হংস, পারাবত ইত্যাদি পালন করেন, কিন্তু সেই সকল জন্তু পালন করিবার রীতি অনেকেই জানেন না। উহাদের নিমিত্ত নির্দিষ্ট স্বতন্ত্র স্থান না থাকায় উহারা বাড়ীর মধ্যেই ঘুরিয়া চরিয়া বেড়ায়। কাজেই বাড়ীখানাকে পশুশালা বা পশুপক্ষীদের “ময়লার ঘর” বলিলেও অত্যুক্তি হয় না। যাহাতে এই জন্তুগুলি রুগ্ন না হইয়া হৃষ্টপুষ্ট থাকে এবং গৃহ নোঙ্গরা করিতে না পারে, তৎপ্রতি গৃহিণীর দৃষ্টি থাকা আবশ্যক। উহাদের বাসস্থান পরিষ্কৃত এবং হাওয়াদার (airy) হওয়া উচিত। নচেৎ রুগ্ন পশুপক্ষীর মাংস খাওয়ায় অনিষ্ট বই উপকার নাই। তবেই দেখা যায়, এক রন্ধন শিক্ষা করিতে যাইয়া আমাদিগকে উদ্ভিদবিজ্ঞান, রসায়ন ও উত্তাপ তত্ত্ব (Horticulture, Chemistry ও Theory of heat) শিখিতে হয়!!

 অম্নের পরই বত্র—না, মানুষ বস্ত্রকে অন্ন অপেক্ষা অধিক প্রয়োজনীয় মনে করে। শীত গ্রীষ্মানুযায়ী বস্ত্র প্রস্তুত কিংবা সেলাই করা গৃহিণীর কর্তব্য। পূর্বে তাহারা চরখা কাটিয়া সূতা প্রস্তুত করিতেন। এখন কল কারখানার অনুগ্রহে কাপড় সুলভ হইয়াছে বটে, কিন্তু নিজ taste (পস) অনুসারে সেলাই করিতে হয়। এ জন্যও সুশিক্ষা লাভ করা আবশ্যক। আপনারা হয়ত মনে করিবেন যে, আমার সব কথাই সৃষ্টিছাড়া। এত কাল হইতে নিরক্ষর দরজীরা ভালই সেলাই করিয়া আসিতেছে, সেলাইয়ের সঙ্গে সুশিক্ষার সম্বন্ধ কি? সেলাইয়ে সহিত পড়ার সাক্ষাৎ সম্বন্ধ নাই বটে, কিন্তু আনুষঙ্গিক (indirect) সম্বন্ধ আছে। পট্টিতে (বিশেষতঃ ইংরাজী) না জানিলে সেলাইয়ের কল {sewing machine-এর) ব্যবস্থাপত্র পাঠ করা যায় না। ব্যবস্থা না বুঝিলে মেশিন্ (machine) দ্বারা ভাল সেলাই করা যায় না। কেবল হাতে সেলাই করিলে লেখা পড়া শিখিতে হয় না, সত্য। কিন্তু হাতের