অবশেষে শকুন্তলা, মনের ব্যথা আর গোপন করা অসাধ্য বিবেচনা করিয়া, দীর্ঘনিশ্বাসপরিত্যাগপূর্ব্বক কহিলেন, সখি! যদি তোমাদের কাছে না বলিব, আর কার কাছেই বলিব; কিন্তু মনের বেদনা ব্যক্ত করিয়া, তোমাদিগকে কেবল দুঃখভাগিনী করিব। অনসূয়া ও প্রিয়ংবদা কহিলেন, সখি! এই নিমিত্তই ত আমরা এত আগ্রহ করিতেছি; তুমি কি জান না, আত্মীয় জনের নিকট দুঃখের কথা কহিলেও, দুঃখের অনেক লাঘব হয়।
এই সময়ে, রাজা শঙ্কিত হইয়া মনে মনে কহিতে লাগিলেন, যখন সুখের সুখী ও দুঃখের দুঃখী জিজ্ঞাসা করিয়াছে, তখন অবশ্যই এ আপন মনের বেদনা ব্যক্ত করিবেক। প্রথমদর্শনদিবসে, প্রস্থানকালে সতৃষ্ণ নয়নে বারংবার নিরীক্ষণ করিয়া, অনুরাগের স্পষ্ট লক্ষণ প্রদর্শন করিয়াছিল, তথাপি এখন কি বলিবে, এই ভয়ে অভিভূত ও কাতর হইতেছি।
শকুন্তলা কহিলেন, সখি! যে অবধি আমি সেই রাজর্ষিকে নয়নগোচর করিয়াছি—এই মাত্র কহিয়া, লজ্জায় নম্রমুখী হইয়া রইলেন, আর বলিতে পারিলেন না। তখন তাঁহারা উভয়ে কহিতে লাগিলেন, সখি! বল, বল, আমাদের নিকট লজ্জা কি? শকুন্তলা কহিলেন, সেই অবধি, তাঁহাতে অনুরাগিণী হইয়া, আমার এই অবস্থা ঘটিয়াছে। এই বলিয়া, তিনি বিষণ্ণ বদনে অপূর্ণ নয়নে লজ্জায় অধোমুখী হইয়া রহিলেন। অন-