শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ
আমার জাত ?
ই, তাও ।
বৈষ্ণবী একটুখানি থামিয়া বলিল, গুনবে আমার ছেলেবেলার ইতিহাস ? কিন্তু
হয়ত তোমার ঘৃণা হবে ।
বলিলাম, তবে থাক, ও আমি গুনতে চাইনে ।
কেন ?
বলিলাম, তাতে লাভ কি কমললতা ? তোমাকে আমার ভারী ভালো লেগেছে । কিন্তু কাল চলে যাবো, হয়ত আর কখনো আমাদের দেখা হবে না। নিরর্থক আমার সেই ভালো লাগাটুকু নষ্ট করে ফেলে ফল কি হবে বল ত ?
বৈষ্ণবী এবার অনেকক্ষণ চুপ করিয়া রহিল। অন্ধকারে নিঃশব্দে দাড়াইয়া সে কি করিতেছে ভাবিধা পাইলাম না। জিজ্ঞাসা করিলাম, কি ভাবচ ?
ভাবচি, কাল তোমায় যেতে দেব না। *
তবে, কবে যেতে দেবে ?
যেতে কোনদিনই দেব না। কিন্তু অনেক রাত হ’লে ঘুমোও । মশারিট। তাল করে গোজা আছে ত ?
কি জানি, আছে বোধ হয় ।
বৈষ্ণবী হাসিয়া কহিল, আছে বোধ হয় । বাঃ—বেশ ত! এই বলিয়া সে কাছে আসিয়া অন্ধকারেই হাত বাড়াইয়া বিছানার সকল দিক পরীক্ষা করিয়া বলিল, বুমোও গোঁসাই-আমি চললুম। এই বলিয়া সে পা টিপিয়া বাহির হইয়া গেল এবং বাহির হইতে অত্যন্ত সাবধানে দরজা বন্ধ করিয়া দিল ।
আজ আমাকে বৈষ্ণবী বার বার করিয়া শপথ করাইয়া লইল তাহার পূর্ব-বিবরণ শুনিয়। আমি ঘৃণা করিব কি না ? বলিলাম, গুনতে আমি চাইনে, কিন্তু শুনলেও ঘৃণা করব না । বৈষ্ণবী প্রশ্ন করিল, কিন্তু করবে না কেন ? সে শুনলে মেয়েপুরুষে সবাই ত ঘূণা করে । বলিলাম, তুমি কি বলবে আমি জানিনে, কিন্তু তবুও আন্দাজ করতে পারি। সে গুনলে মেয়েরাই যে মেয়েদের সবচেয়ে বেশী ঘৃণা করে সে জানি এবং তার কারণও জানি, কিন্তু তোমাকে বলতে আমি চাইনে । পুরুষেরাও করে, কিন্তু অনেক
- @