বৈকুণ্ঠের উইল যাইত, আজ দাড়াইয়া রহিল। বিনোদ কাছে আসিয়া কহিল, কাল সকালেই মাকে নিয়ে আমি নূতন বাসায় যাব। গোকুল অবাক হইয়া কহিল, নূতন বাসায় ? আমাকে না জিজ্ঞাসা করেই বাসা করা হয়েচে না কি ? বিনোদ কহিল, হঁ। এম. এ. পড়া তাহলে ছাড়লে বল ? বিনোদ কহিল, হুঁ । সংবাদটা গোকুলকে যে কিরূপ মৰ্ম্মান্তিক আঘাত করিল, সন্ধ্যার অন্ধকারে বিনোদ তাহা দেখিতে পাইল না । ছোট ভাইয়ের এই এম. এ. পাশের স্বপ্ন সে শিশুকাল হইতেই দেখিয়া আসিয়াছে। পরিচিতের মধ্যে যেখানে যে-কেহ কোন-একটা পাশ করিয়াছে—খবর পাইলেই গোকুল উপযাচক হইয়া সেখানে গিয়া হাজির হইত এবং আনন্দ প্রকাশ করিয়া শেষে এম. এ. পরীক্ষাটা শেষ হওয়ার জন্ত অত্যন্ত ছশ্চিন্তা প্রকাশ করিত। ব্যাপারটা যাহার। জানিত, তাহারা মুখ টিপিয়া হাসিত। যাহারা জানিত না, তাহার উদ্বেগের হেতু জিজ্ঞাসা করিলেই আমার ছোটভাই বিনোদের অনার গ্রাজুয়েটের কথাটা উঠিয়া পড়িত। তখন কথায় কথায় অন্তমনস্ক হইয়া বিনোদের সোনাব মেডেলটাও বাহির হইয়া পড়িত কিন্তু কি করিয়া যে মখমলের বাক্সগুদ্ধ জিনিসটা গোকুলের পকেটে আসিয়া পড়িয়াছে, তাহার কোন হেতুই সে স্মরণ করিতে পারিত না । তাহার একান্ত অভিলাষ ছিল, স্যাক্রা ডাকাইয়া এই দুল্লভ বস্তুটি সে নিজের ঘড়ির চেনের সঙ্গে জুড়িয়া লয় এবং এতদিন তাহ সমাধা হইয়াও যাইত—যদি না বিনোদ ভয় দেখাইত— এরূপ পাগলামি করিলে সে সমস্ত টান মারিয়া পুকুরের জলে ফেলিয়া দিবে। গোকুল উদগ্রীব হইয়া অপেক্ষা করিয়াছিল, এম. এ.-র মেডেলটা না-জানি কিরূপ দেখিতে হইবে এবং এ-বস্তু ঘরে আসিলে কোথায় কিভাবে তাহাকে রক্ষা করিতে হইবে । এ-হেন এম. এ. পাশের পড়া ছাডিয়া দেওয়া হইল শুনিয়া গোকুলের বুকে তপ্ত শেল বিধিল । কিন্তু আজ সে প্রাণপণে আত্মসংবরণ করিয়া লইয়া কহিল, তা বেশ, কিন্তু মাকে নূতন বাসায় নিয়ে খাওয়াবে কি শুনি ? সে দেখা যাবে । বলিয়া-বিনোদ চলিয়া গেল । সে নিজেও মায়ের মত অল্পভাষী ; যে-সকল কথা সে এইমাত্র শুনিয়া আসিয়াছিল, তাহার কিছুই দাদার কাছে প্রকাশ করিল না । y & A
পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দশম সম্ভার).djvu/১৫৭
অবয়ব