জীবানন্দ। না ভায়া, এখন থাক। সাধু-সন্দর্শন যখন-তখন করতে নেই—শাস্ত্রে নিষেধ আছে।
প্রফুল্ল। (হাসিয়া) লােকটা শুনেছি খুব ধনী।
জীবানন্দ। শুধু ধনী নয়, গুণী। চিঠি, খত, তমসুক, দলিল, যথা-ইচ্ছা ইনি প্রস্তুত করে দিতে পারেন-নকল নয়, অনুকরণ নয়, একেবারে অভিনব, অপূর্ব; যাকে বলে সৃষ্টি। মহাপুরুষ ব্যক্তি।
প্রফুল্ল। এ-সব লােককে প্রশ্রয় দেবেন না দাদা।
জীবানন্দ। তার প্রয়ােজন নেই প্রফুল্ল, ইনি নিজের প্রতিভায় যে উচ্চে বিচরণ করেন, আমার প্রশ্রয় সেখানে নাগাল পাবে না।
প্রফুল্ল। শুনলাম সমস্ত মাঠটা আপনার একার নয়, দাদা। এ সম্বন্ধে-
জীবানন্দ। না। প্রফুল্ল, এ-সম্বন্ধে তােমাকে আমি কথা কইতে দেব না। দেনায় গলা পর্যন্ত ডুবে আছি, এর পরে তােমার সৎ-অসতের ভূত ঘাড়ে চাপলে আর রসাতলে তলিয়ে যাবার দেরি হবে না।
জীবানন্দ। তুমি ভাবচ রসাতলে দেরি বা কত? দেরি নেই সে আমি জানি। আরও একটা কথা তােমার চেয়ে বেশী জানি প্রফুল্ল, এর কূল-কিনারাও নেই।
জীবানন্দ। তােমার মস্ত দোষ প্রফুল্প, শেষ হওয়া জিনিসটাও নিঃশেষ হচ্ছে শুনলে তােমার চোখ ছল ছল্ করে আসে। যাও তো ভায়া এককড়িকে পাঠিয়ে দাও ত। আর দেখ, তােমাকে একবার সদরে গিয়ে মাদ্রাজী সাহেবের সঙ্গে পাকা কথা কইতে হবে। বুঝলে? প্রফুল্ল। (মাথা নাড়িয়া) তা হলে এখনাে ত বেলা আছে, আজই ত যেতে পারি। সাহেবের সঙ্গে গাড়ি আছে।
জীবানন্দ। বেশ, তা হলে এঁর গাড়িতে যাও।
জীবানন্দ। টাকা আদায় হচ্চে এককড়ি?
এককড়ি। হচ্ছে হুজুর।
জীবানন্দ। তারাদাস টাকা দিলে?
এককড়ি। সহজে দিতে চায়নি। শেষে কান ধরে ঘােড়-দৌড়, ব্যাঙের নাচ নাচাবার প্রস্তাব করতেই দিতে রাজি হয়ে বাড়ি গেছে। আজ দেবার কথা ছিল।