পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (নবম সম্ভার).djvu/১৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেষ প্রশ্ন শুনিয়া কমল হাসিল। বলিল, তা হলে আমিও দোষ স্বীকার করচি। এতক্ষণ অন্তমনস্ক থাকা আমার অপরাধ। এখন বন্ধন । , হরেন্দ্র চৌকি টানিয়া লইয়া উপবেশন করিলে কমল হঠাৎ একটুখানি গম্ভীর হইয়া উঠিল। একবার কি একটু চিন্তা করিল, তাহার পরে কহিল, দেখুন হরেন্দ্রবাবু, আসলে এর মধ্যে যে কিছুই নেই এ আমিও জানি, আপনিও জানেন । তবু লাগে। এই যে বসতে বলতে ভুলেচি, যে আদরটুকু অতিথিকে করা উচিত ছিল করিনি— হাজার ঘনিষ্ঠতার মধ্যে দিয়েও সে ক্রটি আপনার চোখে পড়েচে । না না রাগ করচেন বলিনি, তবুও কেমন যেন মনের মধ্যে একটু লাগে। এ-সংসারে মানুষের গিয়েও যেতে চায় না—কোথায় একটুখানি থেকেই যায়। না ? হরেন্দ্র ইহার তাৎপৰ্য্য বুঝিল না, একটু আশ্চৰ্য্য হইয়া চাহিয়া রহিল। কমল বলিতে লাগিল, এর থেকে সংসারে কত অনৰ্থপাতই ন হয়। অথচ এইটিই লোকে সবচেয়ে বেশি ভোলে। না ? 聲 হরেন্দ্র জিজ্ঞাসা করিল, এ-সব আমাকে বলচেন, না আপনাকে আপনি বলচেন ? যদি আমার জন্য হয় ত আর একটু খোলসা করে বলুন। এ হেঁয়ালি আমার মাথায় ঢুকচে না । কমল হাসিয়া বলিল, হেঁয়ালিই বটে। সহজ সরল রাস্তা, মনেই হয় না যে বিপত্তি চোখ রাঙিয়ে আছে। চলতে হোচট লেগে আঙুল দিয়ে যখন রক্ত ঝরে পড়ে, তখনি কেবল চৈতন্য জাগে—আর একটুখানি চোখ মেলে চলা উচিত ছিল। না ? * : হরেন্দ্ৰ কহিল, পথের সম্বন্ধে হা। অন্ততঃ আগ্রার রাস্তায় একটু হুস করে চল ভাল—ও দুর্ঘটনা আশ্রমের ছেলেদের প্রায় ঘটে। কিন্তু হেঁয়ালি ত হেঁয়ালিই রয়ে গেল, মৰ্ম্মার্থ উপলব্ধি হ’ল না। so কমল কহিল, তার উপায় নেই হরেনবাবু। বললেই সকল কথার মৰ্ম্ম বোঝা যায় না। এই দেখুন, আমাকে ত কেউ বলে দেয়নি, কিন্তু অর্থ বুঝতেও বাধেনি। হরেন্দ্র বলিল, তার মানে আপনি ভাগ্যবতী, আমি দুর্ভাগ্য । হয় সাধারণ মামুষের মাথায় ঢোকে এমনি ভাষায় বলুন, না হয় থামুন। চিনে-বাজির মত এ যত চাচ্চি খুলতে—তত যাচ্চে জড়িয়ে। অজ্ঞাত অথবা অজ্ঞেয় বাধা থেকে বক্তব্য আরম্ভ হয়ে যে এ কোথায় এসে দাঁড়াল তার কুল-কিনারা পাচ্চিনে । এ-সমস্ত কি আপনি রাজেনকে স্মরণ করে বলচেন ? তাকে আমিও ত চিনি, সহজ করে বললে হয়ত কিছু কিছু বুঝতেও পারর। নইলে এভাবে ঘুমন্ত মানুষের বক্তৃতা শুনতে থাকলে নিজের বুদ্ধির পরে অস্থিা থাকবে না। ›ፃፃ