শাস্তিনিকেতন বিশেষত্ব তো একটি ঐকাস্তিক পদার্থ নয়। মানুষের সত্তার সে একটা প্রাস্তমাত্র। মানুষের এক প্রান্তে তার বিশ্ব, অন্য প্রাস্তে তার বিশেষত্ব । এই দুই নিয়ে তবে তার সম্পূর্ণতা, তার আনন্দ। যদি আপনার স্বষ্টিছাড়া নিজত্বের মধ্যে মানুষের যথার্থ আনন্দ থাকত তা হলে নিজেরই একটি স্বতন্ত্র জগতের মধ্যে সে বাস করতে পারত ; সেখানে তার নিজের সুবিধা অনুসারে সুর্য উঠত কিম্বা উঠত না । সেখানে তার যখন যেমন ইচ্ছা হত তখন তেমনি ঘটত ; কোনো বাধা হত না, সুতরাং কোনো দুঃখ থাকত না । সেখানে তার কাউকে জানবার দরকার হত না, কেননা সেখানে তার ইচ্ছামতোই সমস্ত ঘটছে। এই মুহুর্তেই তার প্রয়োজন অনুসারে যেটা পাখি পরমুহূর্তেই সেটা তার প্রয়োজনমতো তার মাথার পাগড়ি হতে পারে। কারণ, পাখি যদি চিরদিনই পাখি হয়, যদি তার পক্ষিত্বের কোনো নড়চড় হওয়া অসম্ভব হয়, তবে কোনো-না-কোনো অবস্থায় আমাদের বিশেষ ইচ্ছাকে সে বাধা দেবেই— সব সময়েই আমার বিশেষ ইচ্ছার পক্ষে পাখির দরকার হতেই পারে না । আমার মনে আছে, একদিন বর্ষার সময় আমার মাস্তুল-তোলা বোট নিয়ে গোরাই সেতুর নীচে দিয়ে যাচ্ছিলুম– মাস্তল সেতুর গায়ে ঠেকে গেল। এ দিকে বর্ষানদীর প্রবল স্রোতে নৌকাকে বেগে ঠেলছে, মাস্তুল মড়মড় করে ভাঙবার উপক্রম করছে। লোহার সেতু যদি সেইসময় লোহার অটল ধর্ম ত্যাগ করে, যদি এক ফুট মাত্র উপরে ওঠে, কিম্বা মাস্তুল যদি কেবল এক সেকেও মাত্র তার কাঠের ধর্মের ব্যত্যয় করে একটুমাত্র মাথা নিচু করে, কিম্বা নদী যদি বলে ‘ক্ষণকালের জন্যে আমার নদীত্বকে একটু খাটাে করে দিই— এই বেচারার নৌকোখানা নিরাপদে বেরিয়ে চলে যাক, তা হলেই ఇtyశి *
পাতা:শান্তিনিকেতন (দ্বিতীয় খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৯৩
অবয়ব