পাতা:শিক্ষিতা পতিতার আত্মচরিত - মানদা দেবী.pdf/১১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২৬
শিক্ষিতা পতিতার আত্মচরিত

সম্মিলনের অনেক ঘটনা দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন জানিতেন। কিন্তু তিনি যখন দেখিলেন, আর কিছুতেই তাহা প্রতিরোধ করিতে পারিতেছেন না, নীতি-হীনতার জন্য চরিত্রবান কয়েকটি বিশিষ্ট কর্ম্মী চলিয়া গেলেন, তখন দুশ্চিন্তায় তাঁহার হৃদয় দমিয়া গেল— দেহ ভাঙ্গিয়া পড়িল— স্বাস্থ্য নষ্ট হইল। অর্থলোভী কর্ম্মীগণ তাঁহার নিকট হইতে অতিরিক্ত অর্থশোষণ করিতে লাগিল, তদুপরি এই দারুণ আঘাত পাইয়া তিনি আর মাথা তুলিতে পারেন নাই। তাঁহার মৃত্যুর পর শবদেহ লইয়া যে বিরাট শোক যাত্রা হইয়াছিল তাহাতে যোগ দিবার জন্য আমাদের পল্লী হইতে পতিতাগণ গিয়াছিল। আমি যাই নাই। কোন বন্ধুর নিকট বলিয়াছিলাম, দেখুন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জনকে আমরাই মেরেছি। তাঁর অকাল মৃত্যুর জন্য আমরাও দায়ী। দেশ সেবার ছল করে আমরা তাঁহার কর্ম্মীর দলের স্তরে স্তরে পাপের বিষ ছড়িয়ে দিয়েছি। জীবিত অবস্থায় এইভাবে তাঁকে আমরা আঘাত করেছি। আজ মৃত্যুর স্পর্শে যখন তিনি বিশুদ্ধ হয়ে স্বর্গে চলেছেন, তখন আর আমার মত পতিতার পাপ দৃষ্টি যেন তাঁহার পবিত্র মুখের উপরে না পরে।” এই ভাবিয়াই আমি দেশবন্ধুকে শেষ দেখা দেখি নাই।

 এখন সেই ব্রাহ্মণ বধূটী তাহার প্রণয়ীর সঙ্গে স্বামী-স্ত্রী ভাবে বাস করিতেছেন। তাঁহাদের নাকি সন্তান জন্মিয়াছে। সমাজে তাঁহারা এক প্রকার নিঃসঙ্কোচে চলিতেছেন। ব্রহ্মচর্য্য ব্রতাবলম্বী উচ্চ শিক্ষিত (?) দেশকর্ম্মী যুবক এইরূপে পরদার গ্রহণ করিয়া সমাজে মর্য্যাদা লাভ করিয়াছেন— এখন রাজ-দরবারেও তাঁহার উচ্চ আসন। হায় সমাজ, পুরুষের বেলায় তুমি অন্ধ!