পাতা:শেষের কবিতা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 অপর পক্ষের ড্রাইভার জানালে, ‘লোকসান বেশি হয় নি, কিন্তু গাড়ি সেরে নিতে দেরি হবে।’

 অমিত বললে, ‘আমার অপরাধী গাড়িটাকে যদি ক্ষমা করেন তবে আপনি যেখানে অনুমতি করবেন সেইখানেই পৌঁছিয়ে দিতে পারি।’

 ‘দরকার হবে না, পাহাড়ে হেঁটে চলা আমার অভ্যেস।’

 ‘দরকার আমারই, মাপ করলেন তার প্রমাণ।’

 মেয়েটি ঈষৎ দ্বিধায় নীরব রইল। অমিত বললে, ‘আমার তরফে আরো একটু কথা আছে। গাড়ি হাঁকাই—— বিশেষ একটা মহৎ কর্ম নয়, এ গাড়ি চালিয়ে পস্টারিটি পর্যন্ত পৌঁছবার পথ নেই। তবু আরম্ভে এই একটিমাত্র পরিচয়ই পেয়েছেন। অথচ এমনি কপাল সেটুকুর মধ্যেও গলদ। উপসংহারে এটুকু দেখাতে দিন যে জগতে অন্তত আপনার শোফারের চেয়ে আমি অযোগ্য নই।’

 অপরিচিতের সঙ্গে প্রথম পরিচয়ে অজানা বিপদের আশঙ্কায় মেয়েরা সংকোচ সরাতে চায় না। কিন্তু বিপদের এক ধাক্কায় উপক্রমণিকার অনেকখানি বিস্তৃত বেড়া এক দমে গেল ভেঙে। কোন্ দৈব নির্জন পাহাড়ের পথে হঠাৎ মাঝখানে দাঁড় করিয়ে দুজনের মনে দেখাদেখির গাঁঠ বেঁধে দিলে। সবুর করলে না। অকস্মিকের বিদ্যুৎ-আলোতে এমন করে যা চোখে পড়ল, প্রায় মাঝে মাঝে এ-যে রাত্রে জেগে উঠে অন্ধকারের পটে দেখা যাবে। চৈতন্যের মাঝখানটাতে তার গভীর ছাপ পড়ে গেল,

৩৩