অকস্মাৎ তাঁহাকে আমাদের নিকট হইতে কাড়িয়া লইয়া গেল। তিনি যাহা দিবেন মনে করিয়াছিলেন, তাহা দিতে পারিলেন না-বঙ্গসাহিত্য তাঁহার শােভ-সংকলিপিত সম্পদ হইতে বঞ্চিত হইয়া রহিল। বাঙলা ভাষা ও সাহিত্যকে যাঁহারা অভূতপবে শ্ৰীসম্পদে ভূষিত করিয়াছেন, শরৎচন্দ্র তাঁহাদের অন্যতম। চিত্রাঙ্কন-চাতুন্যে ও চরিত্রবৰ্ণনায় তাঁহার সমকক্ষ বা তাঁহার অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ শিলপী, বঙ্কিমচন্দ্র ও রবীন্দ্রনাথের পরে বাঙলায় আর কেহ জন্মিয়াছেন বলিয়া কেহ সত্বীকার করিবেন না। সাহিত্যাকাশে শরৎচন্দ্রের উদয় ঘটিবার পর্বে বাঙালী পাঠক যে সখপাঠ্য কথা-সাহিত্যের অভাব অনভব করিতেছিল, এমন নহে। তখনও এমন শক্তিশালী লেখক ছিলেন, যাঁহারা নিত্য নািতন গলপ-উপন্যাসাদি রচনার দ্বারা পাঠক-চিত্ত বিনোদন করিতেছিলেন। সাহিত্যের এই জমকালো আসরে আসিয়া নািতন সরে নাতন করিয়া গান ধরিয়া আসর জমাইয়া পাঠকের চিত্ত জয় করা যে সহজসাধ্য কাজ ছিল, এ কথা কেহই বলিবেন না। কিন্তু শরৎচন্দ্রের আবিভাবের সঙ্গে সঙ্গেই তাঁহার যশঃসৌরভ দেশময় ছড়াইয়া পড়িল—যেন তাঁহারই জন্য বাঙলার পাঠক-সমাজ শান্য সিংহাসন লইয়া অপেক্ষা করিয়া বসিয়াছিল। সগৌরবে ও সসম্মানে তিনি সে আসন অধিকার করিলেন। শরৎচন্দ্ৰ সহানভূতি ও সমবেদনার উৎস ছিলেন। তিনি নিজেই বলিয়াছেন, ‘সংসারে যারা শােধ দিলে—পেলে না কিছই, যারা বঞ্চিত, যারা দবােল—উৎপীড়িত, মানষ হয়েও মানষে যাদের চোখের জলের কখনও হিসাব নিলে না, নিরাপায় দঃখময় জীবনে যারা কোন দিন ভেবেই পেলে না—সমস্ত থেকেও কেন তাদের কিছতেই অধিকার নেই এদের কাছে কি ঋণ আমার কম ? এদের বেদনাই দিলে আমার মািখ খলে, এরাই পাঠালে আমাকে মানষের কাছে মানষের নালিশ জানাতে।” শরৎচন্দ্র তাঁহার সাধনার অনপ্রেরণা কোথা হইতে লাভ করিয়াছিলেন, তাহার পরিচয় এই কয় ছত্রের মধ্যে সম্পন্ট দেদীপ্যমান রহিয়াছে। ব্যথিতের জন্য এত অধিক বেদনা-বোধ ছিল বলিয়াই তাঁহার সন্ট সাহিত্যে তিনি মমতার ধারা ঢালিয়া দিতে পারিয়াছিলেন। এই অমতেধারার আসবাব্দন-সখী যাহারা উপভোগ করিয়াছে, তাহারা শরৎচন্দ্রকে কখনও ভুলিতে পারে না। Nd
পাতা:শ্যামাপ্রসাদের কয়েকটি রচনা.pdf/২১
অবয়ব