সাহিত্য-সহচর অক্ষয়চন্দ্রের “সাধারণী” পত্রিকাতেও প্রকাশিত হইয়াছিল। রক্ষণশীল নৈঠিক বাঙালী ব্রাহ্মণ-মনীষী ভূদেবচন্দ্রও হিন্দীভাষার পক্ষে অন্যরােপ অভিমত ব্যক্ত করিয়াছিলেন। এই প্রাদেশিকতা-বজিত শাভ বিচারবদ্ধি বাঙালীর তখনও যেমন ছিল, এখনও তেমনি আছে। তবে, অন্য কোন ভাষার উধের্ব মাতৃভাষাকে স্থান দেওয়ার নাম যদি প্রাদেশিকতা হয়, তাহা হইলে অকুন্ঠচিত্তে বলিব, সে প্রাদেশিকতা আমাদের মধ্যে আছে এবং তােহা না থাকিলে আমরা সবাহারা হইয়া যাইব । মনে রাখিতে হইবে, যে বণ্ডিকমচন্দ্র হিন্দীভাষার সাহায্যে ভারতবষের বিভিন্ন প্রদেশের মধ্যে ঐক্য-বন্ধনের কথা বলিয়াছিলেন, তিনিই তাঁহার 'বঙ্গদর্শনের’’ সাঁচনায় লিখিয়াছিলেন—“যতদিন না। সশিক্ষিত, জ্ঞানবন্ত বাঙালীরা বাঙলাভাষায় আপন উক্তি সকল বিন্যস্ত করবেন, ততদিন বাঙালীর উন্নতির কোন সম্ভাবনা নাই।” ভারতের সকল প্রদেশের ভাষাভাষীই নিজেদের ভাষা সম্পবন্ধে একথা বলিতে পারেন। সব জাতির পক্ষে সকল সময়েই ইহা সত্য। কোন প্রদেশ যদি অপর প্রদেশের লোক যাহারা সেখানে কায ব্যাপদেশে স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে বসবাস করিতেছে, তাহদের মাতৃভাষা শিখিতে না দিয়া নানা উপায়ে অপর ভাষায় লেখাপড়া শিখাইবার ব্যবস্থা বা চেন্টা করে, তবে তাহাকে নিন্দা না করিয়া উপায় নাই। যদি কোন প্রদেশ এরােপ ব্যবস্থা প্রবতিত করিতে অগ্রসর হয়, তবে তাহাকে কুব্যবস্থাই বলিব। কারণ, তাহার ফল কিছতেই কল্যাণজনক হইতে CN পারে না। তাহাতে অন্য ভাষাভাষার জাতিগত পরিচয় ও বৈশিষট্য বিনম্ৰাট হইবার সম্ভাবনা থাকিবেই। কোন জাতির পরিচয় ও বৈশিষট্যকে না। রবীন্দ্রনাথও একদিন বলিয়াছিলেন—“ভালই বল, আর মন্দই বল, প্রকৃতি ভিন্ন জাতিকে এমন ভিন্ন ভিন্ন রকম করিয়া গড়িয়াছেন যে, এক জাতকে ভিন্ন জাতের কাঠামোর মধ্যে পরিতে গেলে সমস্তই খাপছাড়া হইয়া যায়।” এই মারাত্মক মনোবাত্তির নামই প্রাদেশিকতা। এই মনোবত্তি মিলনের পথকে অবরাদ্ধ করিয়া জাতি-পরস্পরের মধ্যে কেবল বিরোধ ও বিদ্বেষের ভাবকেই জাগাইয়া তোলে। দেশবন্ধ চিত্তরঞ্জনও বলিয়াছিলেন—“জীবন-ধামের নিয়মে যেখানে বৈচিত্ৰ্য খব বেশী, V O
পাতা:শ্যামাপ্রসাদের কয়েকটি রচনা.pdf/৬৬
অবয়ব