শক্তিধর বাঙালী-শিরোমণিগণ আসিয়া দেশের ধমে, শিক্ষায়, দর্শনে ও বিজ্ঞানে, সাহিত্যে ও রাজনীতিতে যে অপবর্ণ শক্তি সঞ্চার করিয়াছিলেন, তাহাও অনতিকালপর্বে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশবাসীর অন্তরে প্রভাব বিস্তার করিয়াছিল। কিন্তু, আজ আর সে দিন নাই। বাঙালীর সেই মনীষাপারস্পপয্যের দ্যোতক বা সমারক বালিতে এখন আর কিছ দেখিতে পাওয়া যায় না। যাঁহাদের নাম এই মাত্র করিলাম, অনেক সময়ে মনে হয়, তাঁহারা বঝি আমাদের কেহ নহেন। বাস্তবিকই বাঙালী আজ সর্ব কাযে প্রভাহীন, হৃতসব সব হইতে বসিয়াছে। কিন্তু, কেন এমন হইল, তাহাই ত’ ভাবিবার বিষয়। কেহ কেহ হয়ত বলিবেন, যে জাতি দঃখ-দারিদ্র্যের দাবানলে আজ। জবলিয়া পড়িয়া মরিতেছে, সে জাতির আত্মোন্নতি সম্পবন্ধে চিন্তা করিবার অবসর কোথায় ? এই উক্তির মধ্যে যে কিছ সত্য নাই, তাহা আমি বলি না। দঃখের ভীষণ আঘাতে সকল মানষেই প্রথম বিভ্রান্ত ও বিচলিত হইয়া পড়ে। বাঙালীরও আজ সেই দশা ঘটিয়াছে। কিন্তু, সেইজন্য হতাশ হইলে চলিবে না। বাঙালী কোন দিন তাহা হয় নাই। যে বাঙালী একদিন মাৎস্যন্যায় দীর করিয়া মনের মতন রাজা নির্বাচন করিয়াছিল, সেই বাঙ্গালীর বংশধরেরা যে আজ কাঁদিয়া কাঁদিয়া জীবন ক্ষয় করিবে, এ কথা আমি বিশ্বাস করি না। দঃখই শক্তির উৎস। দঃখই মানষের শ্রেদ্ঠ শিক্ষক। সতরাং দঃখ হইতে, বেদনা হইতে, আজ যদি আমরা শক্তি-সঞ্চয় না করিতে পারি,-শিক্ষালাভ না করিতে পারি, তবে তাহার অপেক্ষা বড় ক্ষোভের কথা আর কিছ থাকিবে না। এখন প্রশন এই যে, সে আশার বাণী, সে শিক্ষার কথা আজি আমাদিগকে কে শনাইবে ? ইহার উত্তরে বলিব, মানব-মঙ্গলের শ্রেষ্ঠ মন্দির যে সাহিত্য তাঁহারই পরোহিতবগ সে কাযে ব্ৰতী হইবেন। সাহিত্যই জাতি-জাগরণের প্রধান সহায়। আমাদের দেশের সবদেশীযাগের সম্ৰাট সাহিত্য এই কথারই সাক্ষ্য বহন করিতেছে। বঙ্কিমচন্দ্ৰ বলিয়াছিলেন—“যে লেখনী আতের উপকারাৰ্থে না লিখিল, সে লেখনী নিৰ্ম্মফল হউক।” সাহিত্যাগােরর এই বাণী আধনিক সাহিত্যসেবীরা যেন বিস্মত না হন, ইহাই আমার প্রার্থনা। লোকরঞ্জন করা তাঁহাদের প্রধান উদ্দেশ্য হইতে পারে না, মানষেকে দেবত্বে অনামাণিত করাই তাঁহাদের ব্ৰত। V 83
পাতা:শ্যামাপ্রসাদের কয়েকটি রচনা.pdf/৭০
অবয়ব