শ্ৰীকান্ত V*為 সেদিন শ্রাবণের অমাবস্তা। রাত্রি বারোটার পর ঝড় এবং জলের প্রকোপে পুথিবী যেন উপড়াইয়। যাইবার উপক্রম করিল। সমস্ত জানালা দরজা বন্ধ ; আমি খাটের অদূরে বহু প্রাচীন অৰ্দ্ধভগ্ন একটা ইজি চেয়ারে শুইয়া আছি । নিরুদিদি স্বাভাবিক মুক্তকণ্ঠে আমাকে কাছে ডাকিয়া হাত তুলিয়। আমার কানটা, তার মুখের কাছে আনিয়া, ফিস্ ফিস করিয়া বলিলেন, শ্ৰীকান্ত. তুই বাড়ী য। সে কি নিরুদি, এই ঝড়-জলের মধ্যে ? তা হোক ! প্রাণটা আগে । ভুল বকিতেছেন ভাবিয়া বলিলাম, আচ্ছ। যচ্চি—জলট একটু থামুক । নিরুদিদি ভয়ানক বাস্ত হইয়া বলিয়া উঠিলেন, না, ন, শ্রীকান্ত, তুই য। যা ভাই য—আর এতটুকু দেরি করিসনে—তুই পাল । এইবার তার কণ্ঠস্বরের ভঙ্গীতে আমার বুকের ভিতরটায় ট্যাৎ করিয়া উঠিল। বললাম আমাকে যেতে বল্ছ কেন ? প্রত্যুত্তরে তিনি আমার হাতট। টানিয়া লইয়। রুদ্ধ জানালার প্রতি লক্ষ্য করিয়া চেচাইয় উঠিলেন, যাবিনি, তবে কি প্রাণট। দিবি ? দেখচিসনে, আমাকে নিয়ে যাবার জন্যে কালে কালো সেপাই এসেচে ? তুই আছিস বলে ঐ জানাল দিয়ে আমাকে শাসাচ্চে ? তার পরে সেই যে সুরু করিলেন—ঐ খাটের তলায় ! ওই মাথার শিয়রে । ওই মারতে আসচে ! ওই নিলে । ওই ধরলে ! এ চীৎকার শুধু থামিল শেষরাত্রে, যখন প্রাণটাও প্রায় শেষ হইয়া আসিল ।
