পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/১৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুর্থ অধ্যায় : বড়লিখার পুরকায়স্থ কথা এবং প্রতাপগড়ের বিবরণ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ১৭৩ করিতেন ॥৭ দুৰ্ল্লভ দাসের আর একটি কাৰ্য ভৃত্য বা ভাণ্ডারী সংগ্ৰহ। নৌকা পূজার প্রাক্কালে তিনি অনেক ভৃত্য একত্রিত করেন, এক রাত্র মধ্যে এই সংগৃহীত ভৃত্যদের মধ্যে ১০৮টি বিবাহ সম্পাদন করিয়াছিলেন। এই ভাণ্ডরিগণ “দুৰ্ল্লভ দাসী ভাণ্ডারী” নামে খ্যাত আছে। শ্রীহট্ট জিলার মধ্যে তাহার লবণের "একচেটিয়া” ব্যবসায় ছিল, তাহার কৰ্ম্মচারী ব্যতীত অন্য কেহ লবণের কারবার করিতে পারিত না । এই ব্যবসায়ে তিনি প্রভূত ধন উপাৰ্জ্জন করেন, অদ্যপি "দুলভদাসী ধন" বলিয়া সেই ধনের প্রবাদ আছে ৮ তাহার দাতৃত্বাদি গুণে মোহিত হইয়া মুর্শিদাবাদের নবাব তাহাকে “মোনশফদার” উপাধি প্রদান করেন। তাহার দুই পুত্র, ইহাদের নাম হুকমত রায় ও সাহেব রায় । হুকমত রায় ও সাহেব রায় হুকম রায়ের নামোল্লেখ পূৰ্ব্বে করা গিয়াছে। হুকমত রায় অশেষ গুণসম্পন্ন ও প্রসিদ্ধ ব্যক্তি ছিলেন । তিনিও জ্যেষ্ঠতাত এবং পিতার মত দাতা ও জনহিতকারী ছিলেন । তাহার সময়ে বঙ্গদেশে অকাল উপস্থিত হইয়াছিল, সহস্ৰ সহস্র ব্যক্তি তখন তাহার দাতৃত্বে প্রাণ রক্ষা করিতে সমর্থ হয়। তাহার ভ্রাতা সাহেব রায়ের তত্ত্বাবধানে সেই বিতরণ কাৰ্য সম্পাদিত হয়। হুকমত রায়ের এই এই দেশ হিতকর পবিত্র কার্যের পুরষ্কার স্বরূপ রাজানুগ্রহে নিজ অধিকর মধ্যে তিনি একরূপ স্বাধীনতা লাভ করেন, তিনি নিজ প্রজাপুঞ্জের সৰ্ব্বপ্রকার বিচার ক্ষমতা প্রাপ্ত হন; বিচার প্রাপ্তির জন্য এবং অপরাধের দণ্ডভোগ জন্য তাহাদিগকে কাজি প্রভৃতি অপর বিচারকের আদেশের মুখাপেক্ষী হইতে হইত না ৯ তাহার ভ্রাতা সাহেব রায়কে নবাব "রাজাজী” উপাধি দ্বারা সম্মানিত করিয়াছিলেন । হুকমত রায় এইরূপে এক অদ্বিতীয় ক্ষমতাশালী শক্তিরূপে গণ্য হইলেও পৈতৃক ব্যবসায়ে তাহার অনুৎসাহ ছিল না; তবে মুর্শিদাবাদের নবাবের অনুগ্রহে এইরূপ “নবাবি" পাইলে, বাণিজ্যাপেক্ষ দেশে সুশাসন বিস্তারেই তাহার মনোযোগ আকৃষ্ট হয়। হুকমত রায়ের অর্থ সম্বন্ধে নানাবিধ আখ্যায়িকা প্রচলিত আছে । তাহার মাতা, বাণিজ্যাপেক্ষা দেশ শাসনাদিতে পুত্রের আশক্তি দর্শনে পুত্র ধন সংরক্ষণে সক্ষম কি না, তদ্বিষয়ে সংশয়ান্বিতা হইয়া, প্রকারান্তরে তদ্বিষয়ে উৎসাহিত করিবার ইচ্ছায়, তাহার “কত অর্থ আছে" তাহা দেখিতে চাহেন। হুকমত রায় তখন ভিন্ন স্থানের কাছারীর কৰ্ম্মচারিদিগকে এবং বিভিন্ন গদীর তত্ত্বাবধায়ককে এক নির্দিষ্ট দিনে অর্থরাশি গৃহে আনিতে আদেশ দিলেন। তদনুসারে এক ত্রয়োদশী তিথিতে সমস্ত অর্থ আনীত হয়। ৭ ঢাকাদক্ষিণের মিশ্রবংশীয়গণ কর্তৃক ১১৬৬ বাং ১১ই আষাঢ় তারিখের সম্পাদিত "সময় করার পত্র" নামক দলিলে ইহার উল্লেখ আছে। পূৰ্ব্ববৰ্ত্ত ১ম খণ্ডের ৩য় অধ্যায়ে টীকায় এই দলিল উদ্ধৃত হইয়াছে। ৮. ধনের আধিক্য জ্ঞাপনার্থ যেমন "কুবেরের ধন”, “যক্ষের ধন” ইত্যাদি কথা আছে। তদ্রুপ এ অঞ্চলে “দুলভদাসী ধন” কথাটিও কোন কোন স্থলে বলা হইয়া থাকে।

  • "He rendered to Government granted him a Sanad vesting him with the powers

of sole Governor of the people in his jurisdiction." A short History of the Purkayashta Family. শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত পূৰ্ব্বাংশ ২য় ভাগ ২য় খণ্ড ৪র্থ অধ্যায় এবং এই অধ্যায়ের ১ম পাদ টীকায় ইহার নবাবি প্রাপ্তির প্রসঙ্গ আলোচ্য ।