পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/২৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দ্বিতীয় অধ্যায় ; বাণিয়াচঙ্গের ব্রাহ্মণ বিবরণ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ২৯১ মেঘ নারায়ণ যখন নবদ্বীপে পৌছিলেন, লোক পাঠাইয়া রাজা অভ্যর্থনা করিয়া তাহাকে সভায় আনয়ন করিলেন। কিন্তু মহাদেবের পরিবৰ্ত্তে এই বালকমূৰ্ত্তি দর্শনে সভাসদবর্গের প্রীতি জন্মিল না। সেই সভাসীন এক “দিগ্বিজয়ী পণ্ডিত” বালক মেঘ নারায়ণকে দেখিয়া দর্পভরে বলিয়া উঠিলেন “ইচ্ছা ছিল মহাপণ্ডিত মহাদেবকে এই মহাসভায় পরাজয় করিব। ভয়েই বোধ হয় তিনি পুচ্ছ সঙ্কুচিত করিয়াছেন। আর স্বর্ণ-বলয়-ভূষিত বালক তুমি কি সঙ্গীত শুনাইতে আসিয়াছ? আশ্চৰ্য্য মহাদেবের বুদ্ধি! এ তো গ্রাম্য নিমন্ত্রণ নহে যে, ছেলে-পাঠাইয়া “সমাজত্ব" রক্ষা করিতে হইবে। ধিক তাহাকে, যে পরাজয় ভয়ে আত্মগোপনে ঘৃণা করে না।" বালক মেঘ নারায়ণ পিতৃ-নিন্দা সহিতে পারিলেন না, ভুজঙ্গ-শিশুর ন্যায় উন্নত মস্তকে সদৰ্পে বলিয়া উঠিলেন,-“পণ্ডিত! তুমিই ধিকৃতি যোগ্য-পূজনীয় পিতা নহেন। যে পণ্ডিত হইয়া বৃথা দম্ভ করে, সে মূর্খ; সে দিগ্বিজয়ী নহে-সৰ্ব্বত্র পরাজিত। তাহার বিদ্যাবুদ্ধি দম্ভকর্তৃক নিজ্জিত-সে পরাজিত; দিশ্বজয়ী তাহাকে কে বলে? সঙ্গীত-কারক ছোকরার হাতে স্বর্ণবলয় থাকে, এই সাদৃশ্যে আমাকে উপহাস করিয়াছ; ইহাই কি তোমার পাণ্ডিত্য? পক্ককেশ পিতৃসাদৃশ্যে সুতরাং তুমি ঐ সম্মুখবর্তী ভৃত্যকেও পিতৃসম্বোধন করিতে পারে; সাদৃশ্যেই তোমার প্রমাণ-বস্তু বিচার নহে।” পিতৃ-নিন্দা-কাতর উত্তেজিত দ্বিজ-সুতের সঙ্গত কথা চতুর্দিকে প্রতিধ্বনিত হইতে লাগিল, সভায় তাহার জয়ধ্বনি উত্থিত হইল । বালকের বাক্যে দিগ্বিজয়ী লজ্জিত ও নিৰ্ব্বাক হইয়া রহিলেন। প্রকৃত পক্ষে তিনি পরাজিত হইলেন। সমাগত পণ্ডিতবর্গ সেই সভায় বালককে “তর্কভূষণ" উপাধি দিলেন। তখন কখন কখন পরাজিত ব্যক্তির মাথার উপর বিজিত পণ্ডিত আপন উপবেশনাসন ঝাড়িয়া দিতেন; ইহাতে তাহার পরাজয়ের পরাকাষ্টা প্রদর্শিত হইত। উত্তেজনা বশতঃ এবং কাহার কাহারও ইঙ্গিতে, মেঘ নারায়ণ সেই প্রথামত পরাজিতের মাথায় আসন ঝাড়িয়া দিলেন। দলিত-ফণ সৰ্পের ন্যায় তখন দিগ্বিজয়ী ক্রুদ্ধ হইয়া বলিলেন-"জেঠা ছেলে, তুমি যে অবৈধতা করিলে, তাহার ফলে তোমার সপ্তম পুরুষ পর্যন্ত কোনও ব্যক্তি অন্যকে জয় করিলে জীবিত থাকিবে না। পণ্ডিত হইলেই মৃত্যু হইবে।” মাতৃ আশীৰ্ব্বাদে বালক মেঘ নারায়ণ বিজয় গৌরবের সহিত বাড়ী আসিলেন, মহাদেব শিষ্যগণের মুখে পণ্ডিত-পরাজয়ের কথা শুনিয়া সুখী হইলেন না। বিমৰ্ষভাবে তিনি তখন যাহা বলিয়াছিলেন, তাহার মৰ্ম্ম এই যে, দৈবতঃ পুত্রকর্তৃক শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি পরাজিত হইয়াছেন, ইহা দৈবখেলা মাত্র; কিন্তু পণ্ডিতকে অপদস্থ করা বালকের পক্ষে ভাল হয় নাই। তিনি আরও বলিলেন-আশ্রিত দৈবশক্তি অযথা ক্ষয়িত হইলে, ইহা ইষ্টদায়ক হয় না এবং পুনঃ লাভ করা কঠিন হইয়া পড়ে। সতীর অদ্ভুত কীৰ্ত্তি কথা ,-7: যাহোক, মেঘ নারায়ণ ও তাহার ভ্রাতৃদ্বয় দেখিতে দেখিতে বিবিধ শাস্ত্রে পণ্ডিত হইয়া উঠিলেন, কিন্তু পিতৃনিষেধানুসারে তাহার কেহই কোন উপাধি গ্রহণ করিলেন না। মেঘ নারায়ণের সন্তানসন্তুতি হয় নাই। মহাদেবের মধ্যম পুত্র রামরামের স্ত্রী পরম সাধিকা ছিলেন, তাহার বারব্রত পালন ও ইষ্টনিষ্ঠা অদ্ভুত ছিল। তদ্ব্যতীত রমণীর সারধৰ্ম্ম-অনন্য সাধারণ পণ্ডিতভক্ত তাহার প্রধান অলঙ্কার স্বরূপ হইয়াছিল। পাতিব্রাত্য ফল প্রভাবে তাহার এরূপ ক্ষমতা জনিয়াছিল যে, ভবিষ্য