পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৪৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জীবন বৃত্তান্ত শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ৫৭ টাকায় বংশ তালিকা দেখুন) ইতি শিলচরের প্রসিদ্ধ উকিল ছিলেন, ইনি ও তাহার সহোদর দীননাথ নদী মজুমদার অত্যন্ত গৌরবের সহিত উকালতি করিয়া প্রভূত অর্থোপাৰ্জ্জন করিয়া গিয়াছেন। বৃদ্ধ বয়সে উকালতি ছাড়িয়া আসিবার সময় তাহার মক্কেল কাছাড়ের প্রায় সমস্ত প্লেন্টার সভা করিয়া ও প্রচুর উপটৌকন দিয়া তাহার অসাধারণ গুণ সত্তার সাক্ষ্য প্রদান করিয়া ছিলেন। দুঃখের বিষয় ইহার বিস্তৃত জীবন চরিত আমরা পাই নাই। কাছাড়ে ইনি সেরূপ প্রতিভা ও গৌরব প্রদর্শন করিয়া গিয়াছিলেন, সুখের বিষয় মাননীয় শ্রীযুক্ত কারিনা কুমার চন্দ চৌধুরী ও শ্রীযুক্ত মহেশ চন্দ্র দত্ত প্রমুখ ব্যবহারজীবী মহাশয়গণ তাহ অব্যাহত রাখিয়া শ্রীহট্টের গৌরব বদ্ধন করিতেছেন । চন্দ্রশেখর আচাৰ্য্যরত্ন শ্রীচৈতন্য ভাগবতে শ্রীহট্টবাসী ভক্তগণের নামের মধ্যে চন্দ্র শেখরের নামও আছে। চন্দ্র শেখর বৈদিক শ্রেণীর ছিলেন এবং বিদ্যা শিক্ষার জন্য নবদ্বীপে গমন করিয়া ছিলেন। চন্দ্র শেখর পাঠ সমাপন পূৰ্ব্বক আচাৰ্য্যরত্ন উপাধি প্রাপ্ত হন। নবদ্বীপে মায়াপুর নামক পল্লীতে শ্রীহট্ট বাসী জগন্নাথ মিশ্র প্রভৃতি বাস করিতেন। চন্দ্রশেখরও ঐ পল্লীতেই থাকিতেন। সুপাত্র বোধে প্রসিদ্ধ জ্যোতিষী নীলাম্বর চক্রবর্তী ইহার নিকট আপন কনিষ্ঠা কন্যা সৰ্ব্ব জয়াকে সম্প্রদান করেন। বিবাহের পর নবদ্বীপে বাড়ী প্রস্তুতক্রমে তথায় বাস করিতে থাকেন, ইহার বাড়ী জগন্নাথ মিশ্রের বাটিকা হইতে যে অধিক দূরে ছিল না, তাহা বুঝিতে পারা যায়। চন্দ্রশেখরের পত্নী শ্ৰীগৌরাঙ্গের মাসী ছিলেন, চন্দ্রশেখরের বাড়ীতে তাহার যাতায়াত ছিল। শ্ৰীগৌরাঙ্গ গয়া হইতে আসিয়া পরম ভক্ত রূপে পরিচিত হন, ঐ সময় একদা তিনি পাত্র ও পাত্রী নির্দেশে নাটকাকারে কৃষ্ণ লীলার অভিনয় করেন। বঙ্গদেশে বঙ্গভাষায় ইহাই সৰ্ব্ব প্রথমে নাটকাভিনয়, গৌরাঙ্গই তাহার উদ্ভাবক। এই অভিনয় চন্দ্র শেখরের গৃহে হইয়াছিল। গেীর জননী শচী দেবী বধূ বিষ্ণুপ্রিয়ার সহিত এই অভিনয় দেখিতে গিয়াছিলেন; শ্রীবাস পত্নী মালিনী, ধাত্রীমাতা নারায়ণী (ইনি শ্রীবাসের ভ্রাতুষ্পপুত্ৰী নহেন) বিষ্ণুপ্রিয়া—সখী কাঞ্চনা প্রভৃতি মায়াপুরের অনেক স্ত্রীলোকই নাটক দর্শনে গিয়াছিলেন। চন্দ্রশেখরের গৃহ গ্রামের কেন্দ্রস্থলে ছিল বলিয়া রমণীগণের যাতায়াত সুবিধাজনক ছিল । জগন্নাথ মিশ্রের মৃত্যুর পর চন্দ্রশেখর শ্রীগৌরাঙ্গের অভিভাবক স্বরূপ ছিলেন কিন্তু পরে ইনিও তাহার ভক্তরূপে পরিগণিত হন। শ্ৰীগৌরাঙ্গ যখন সন্ন্যাস গ্রহণ করেন, চন্দ্রশেখর তখন কাৰ্য্য সম্পাদনের ভার দিয়াছিলেন। চন্দ্রশেখর যন্ত্র চালিতবৎ এই নিদারুণ কাৰ্য্যভার পালন করিয়াছিলেন। কিন্তু ইহাতে তাহার কিদৃশ ক্লেশ সহ্য করিতে হইয়াছিল, তাহা অনুমেয়। সন্নাসের পর শ্রীগৌরাঙ্গ শ্ৰীক্ষেত্রে গমন করেন, চন্দ্রশেখর তাহাকে দেখিতে প্রতি বৎসর নীলাচলে যাইতেন । পদকল্পতরু প্রভৃতি পদাবলী গ্রন্থে অল্প সংখ্যক অতি সুন্দর ইহার পদ আছে। আচাৰ্যরত্ন প্রাগুক্ত নাটকাভিনয়ে অভিনেতাদের অন্যতম ছিলেন সঙ্গীতালোচনায় তাহার অনুরাগ ছিল। জগদীশ তর্কালঙ্কার জগদীশ তর্কালঙ্কার একজন প্রসিদ্ধ নৈয়ায়িক ছিলেন, ইহার নামে ন্যায়শাস্ত্রকে "জাগদীশ” বলিয়া থাকে, ইহাতে তাহার কৃতিত্ব অনুভব করা যাইতে পারে। জগদীশের প্রতিভা নবদ্বীপেই