পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৪৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬৪ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত চতুর্থ ভাগ জয় গোবিন্দ সোম জয়গোবিন্দ সোম শ্রীহট্টের সাহুবংশে জন্মগ্রহণ করেন, তিনি শহরের উপকণ্ঠ আকালিয়াবাসী দোল গোবিন্দ সোমের পুত্র। ওয়েলশ মিশনের প্রচারক প্রাইজ সাহেবের নাম শ্রীহট্টবাসী ভুলিবে না, প্রাইজ সাহেবই শ্রীহট্টে ইংরেজী শিক্ষার বীজ রোপন করিয়া ছিলেন। জয়গোবিন্দ ইহার প্রতিষ্ঠিত মিশন স্কুলে প্রথমে প্রবিষ্ট হন। জয়গোবিন্দ বুদ্ধিমান ছাত্র ছিলেন, ১৮৭১ খৃষ্টাব্দে তিনি প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়া অধ্যয়নের জন্য কলিকাতা গমন করেন এবং ১৮৬৩ অব্দে এফ এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়া, বি এ এবং এম এ পরীক্ষা এক সঙ্গে দিতে প্রস্তুত হইতে থাকেন। ১৯৬৫ খৃষ্টাব্দে এম এ অনার পরীক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকাতে সৰ্ব্ব প্রথম জয়গোবিন্দ নাম দৃষ্ট হইবে। এইরূপ অল্প সময়ের মধ্যে এই উভয় পরীক্ষায় সম্মানের সহিত উত্তীর্ণ হওয়া সামান্য শক্তির পরিচালক নহে; এরূপ প্রতিভা অধিক দৃষ্ট হয় না। জয়গোবিন্দের পূৰ্ব্বে শ্রীহট্টবাসী কেহ এম এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন নাই। ইনিই শ্রীহট্টের,—শ্রীহট্টের কেন হয়তঃ পূৰ্ব্ববঙ্গের প্রথম এম এ । জয়গোবিন্দ কলিকাতা হইতে বাড়ী আসিয়া অল্প কিছুকাল মিশন স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কাজ করিয়া ছিলেন, তৎপর কলিকাতায় চলিয়া যান এবং কেথিড্রেল মিশন কলেজের দর্শন শাস্ত্রের অধ্যাপক নিযুক্ত হন, ও সঙ্গে সঙ্গে আইন অধ্যয়ন করিতে থাকেন। ১৮৭১ খৃষ্টাব্দে তিনি বি, এল, পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়া দেশে আগমন করেন ও কিছু দিনের জন্য জজ আদালতে উকালতিতে নিযুক্ত হন। কলিকাতায় তৎকর্তৃক এক খানা সংবাদ পত্র পরিচালিত হইত। ইহার খাতিরে পুনঃ তিনি কলিকাতায় চলিয়া যান ও কলিকাতা হাইকোর্টে ব্যবসায় চালাইতে থাকেন। তিনি তদবধি আমরণ কলিকাতা হাইকোটে উকালতি করিয়া ছিলেন। সকলেই খৃষ্টধৰ্ম্ম অবলম্বন করিয়া ছিলেন, জয়গোবিন্দ তন্মধ্যে অন্যতম। ১৮৭৫/৭৬ খৃষ্টাব্দে তিনি কলিকাতা হইতে “ইণ্ডিয়ান খ্ৰীষ্টিয়ান হেরাল্ড" নামক ইংরেজী পত্রিকা পরিচালনা করেন; শ্রীহট্টবাসী কর্তৃক পরিচালিত ইংরেজী কোনও পত্রিকা তৎপূৰ্ব্বে বাহির হয় নাই। তিনি ইণ্ডিয়ান খৃষ্টিয়ান সোসাইটির" প্রতিষ্ঠা করিয়াছিলেন এবং তাহার সেক্রেটারী ছিলেন। বাঙ্গালী খৃষ্টান সমাজে জয়গোবিন্দ প্রধান স্থান অধিকার করিয়া ছিলেন। জয় গোবিন্দ একজন বিশ্বাসী খৃষ্টান ছিলেন বটে; কিন্তু হিন্দুধৰ্ম্মকেও তিনি বিশেষ সম্মান ও ভক্তির চক্ষে দেখিতেন। কদাপি হিন্দু ধৰ্ম্মের নিন্দাবাদ তাহার মুখ দিয়া বাহির হইত না, বরং হিন্দুর বাল্য বিবাহ প্রথা সমর্থন করিয়া তিনি ১২৯৩ সনে এক বক্তৃতা করিয়াছিলেন। স্বদেশ ও স্বদেশীয়ের প্রতি তাহার প্রগাঢ় প্রীতি ছিল । তিনি পীড়িত হইয়া মধুপুরে বায়ু পরিবর্তন করিতে গিয়াছিলেন; তাহার স্বদেশ হইতে বহুদূরে—মধুপুরে ১৯০০ খৃষ্টাব্দের ৩য় অক্টোবর তারিখে তিনি মৃত্যুমুখে পতিত হন।৬৩ জয় নারায়ণ (রাজা) ইনি জয়ন্তীয়া রাজ্যের অধিপতি ছিলেন, ইহার বিস্তারিত বৃত্তান্ত শ্রীহট্টের ইতিবৃত্তের পূৰ্ব্বাংশে ৩য় ভাগ ৪র্থ খণ্ডের ৩য় অধ্যায়ে বর্ণিত হইয়াছে বলিয়া এস্থানে কিছুই লিখিত হইল না। ৬৩. ইহার স্মৃতি রক্ষার্থে তদীয় চিত্র “শ্রীহট্ট গৌরব চিত্রাবলী" ভুক্ত হইয়া সযত্নে রক্ষিত হইয়াছে।