পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৫১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জীবন বৃত্তান্ত শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ১১৫ সাহাজীর প্রতি সঙ্গীদের একব্যক্তির বিশেষ শ্রদ্ধা ছিল, সে একথাটি ভুলিয়া না গিয়া দেশে আসিলে যাহারা ঢাকাদক্ষিণের রথে গিয়াছিল, তাহাদের কাছে সন্ধান পাইল যে, রথের সময় কোন ঘটনা ঘটিয়াছিল কি না, কিছু হয় নাই বলিয়া সকলেই বলিল । একব্যক্তি বলেন—“সামান্য একটা ঘটনা হইয়াছিল মাত্র, প্রভুর মাথার মুকুটটা পড়িয়া যাইতেছিল, কিন্তু পড়ে নাই ; একব্যক্তি হঠাৎ ধরিয়া ফেলিল ।” সেই ব্যক্তি অতঃপর ঢাকাদক্ষিণে গিয়াও অনুসন্ধানে এই কথাই জানিতে পারে। বৃন্দাবনে তুলসীতলায় ধ্যানাবিষ্ট সাধুর উচ্চারিত বাক্যদ্বয়ের অর্থ তখন বুঝিতে পারা গেল। ঐকান্তিক ভক্তের ভাবনেত্রে সময়ে সময়ে কিরূে দূরবত্তী ঘটনা-চিত্রের ছায়াপাত হয়, তাহারাই তাহা বলিতে ও বুঝিতে পারেন। মহাপ্রভুর নাটমন্দির পূৰ্ব্বে পাকা ছিল না, ইহা পাকা করিতে তাহার ইচ্ছা হয় ; কিন্তু সেই গৃহখানা অতি সুন্দর ছিল বলিয়া মিশ্ৰঠাকুরগণ উহা ভাঙ্গিতে প্রস্তুত ছিলেন না। কয়েক বৎসর পরে পাহারাদারের মশালের আগুনে গৃহখানা ভষ্মিভূত হয়। এই সময় সাহাজীর আর্থিক অবস্থা অনেকটা মলিন হইয়া পড়িয়াছিল, হাতে টাকা ছিলই না কিন্তু তাহাতে তিনি নিরস্ত হইলেন না ও সংবাদ প্রাপ্তি মাত্র কতকখানা ইষ্ট লইয়া উপস্থিত হইলেন নাট মন্দিরের “নেউ" বা ভিত্তিস্থাপন করিয়া চলিয়া গেলেন। কাজ সেই পৰ্য্যন্ত পড়িয়া রহিল। তাহার কিছুকাল পরে তিনি কতক তৈল আনাইতে টাকা পাঠাইলেন। মনে সঙ্কল্প রহিল যে এই বারে যত লভ্য হইবে, তৎসমস্ত মন্দির নিৰ্ম্মাণে অপিত হইবে । কিন্তু ছাতকের বাজারের ভাটিতে আসিয়াই নৌকা ডুবিয়া গেল! সাহাজীর আশা পুরিল না, তখন তাহার কাছে এই সংবাদ আসিল, তিনি “প্রভুর যেমন ইচ্ছা" এই মাত্র বলিলেন। পরে শীত ঋতুর অবসানে নদীর জল যখন কমিয়া গেল, তখন সাহাজীর ডুবা-নৌকার “গলুইটি” জলের উপরে দৃষ্ট হইতেছে বলিয়া সংবাদ আসিল। নৌকা চেষ্টা করিলে উথোলিত হইতে পারে বলিয়া সংবাদ পাইয়া তিনি একটি লোক পাঠাইয়া দিলেন। সেই লোকটি “ডুবারি” দ্বারা অনুসন্ধান লইয়া জানাইল যে, বোঝাই নৌকাখানা পলিমাটিতে বসিয়া রহিয়াছে ; মালপত্রও নষ্ট হয় নাই, তুলাইতে পারিলে উঠিবে। সাহাজীর তখন স্বয়ং তথায় গিয়া বহুলোক লাগাইয়া সন্তুপর্ণে সুকৌশলে অগ্রে তৈল ভাণ্ডগুলি উঠাইয়া লইলেন, দেখা গেল যে মুখঢাকা তৈলপূর্ণ পাত্র সমূহে জল প্রবিষ্ট হয় নাই, ফলে সকল তৈলই মিলিল । এই সময়ে তৈল অগ্নিমূল্য হইয়া উঠিয়াছিল, সুতরাং এই তৈলবিক্রয়ে চতুগুণ লভ্য হইল ও তদারা মহাপ্রভুর নাটমন্দির প্রস্তুত হইয়া গেল! এই নাট মন্দির অনেক দিন ছিল, বিগত ভূকম্পে বিনষ্ট হইয়া যায়। শ্রীহট্টের কালীঘাটের জগন্নাথ দেবতাকে প্রতিবৎসর নিয়মিতরূপে ২/৩ দিনের জন্য তিনি নিজগৃহে আনিয়া মহামহোৎসব করিতেন। কথিত আছে, চট্টগ্রাম বাসী জনৈক কুষ্টরোগী শ্ৰীক্ষেত্রে “হত্যা” দিয়াছিল ও প্রত্যাদেশ প্রাপ্তে ইহার কাছে আসিয়া প্রসাদপ্রার্থী হয়, বহু অনুনয়ে তিনি ভুক্তাবশেষ স্বরূপ একটি বাতাসা দিয়া তাহাকে বিদায় করিয়াছিলেন। সেও তাহাতেই তুষ্ট হইয়া চলিয়া গিয়াছিল। এইরূপ প্রত্যাদেশ ও প্রসাদগ্রহণের কথা আরও শুনা যায়, ইহার ভিতরকার রহস্য কি, বলা যায় না। রমজান মণ্ডল করণশীর অন্তর্গত মতির গ্রামে রমজান মণ্ডল নামে এক মোসলমানের বাস ছিল। ইনি একটি সাধকমণ্ডলীর অগ্রণী। এই সাধক মণ্ডলে স্ত্রী পুরুষ একত্রে সম্মিলিত হইয়া ধৰ্ম্মসঙ্গীতাদি ও