পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৫১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জীবন বৃত্তান্ত শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ১১৭ স্বদেশে ফিরিয়া আসেন, দরিদ্র ছাত্রবর্গ বিদেশে গিয়া শিক্ষালাভে সমর্থ হয়, এইজন্য তাহাদের সাহায্যার্থে তিনি দেশে আসিয়াই “চারিআনা ফান্ডের" উদ্বোধন করেন। অতঃপর তিনি কাশ্মীর রাজ্যের খনিত্ত্ববিদের পদে প্রতিষ্ঠিত হইয়া শ্রীনগরে গমন করেন। কিছুদিন তথায় কাজ করিয়া ছুটি লইয়া দেশে আসেন, যখন রমাকান্ত কলিকাতায় পৌছিলেন, তখন স্বদেশী আন্দোলনের সূচনা হইয়াছে। রমাকান্ত তখন মাতৃসেবায়—আত্ম-শক্তি ঢালিয়া দিলেন। ছুটির দিন দেখিতে দেখিতে চলিয়া গেল, রমাকান্ত মাতৃসেবা ছাড়িয়া যাইতে পারলেন না, আবার বিদায় চাহিলেন কিন্তু বিদায় পাইলেন না, তখন তাহার আয়ের একমাত্র পথ চাকুরীটি ছাড়িয়া দিতে হইল, দেশের কাজের জন্য যাহারা ত্যাগ স্বীকারে আনন্দিত হন, রমাকান্ত তাহাদের অগ্রগণ্য ছিলেন। “ইণ্ডিয়ান এসোসিয়েশন গৃহে সুরেন্দ্র বাবু প্রভৃতির সমক্ষে প্রস্তাব করা হইল দেশীদ্রব্য বিনালাভে যুবকদিগের দ্বারা বিক্রয়ের কোন উপায় হয় কি না? সকলে আনন্দের সহিত এ প্রস্তাব গ্রহণ করিলেন।” “রমাকান্ত বলিলেন কালই তিনি হাটে গিয়া কাপড় লইয়া আসিবেন। সেদিন শুদ্ধ পরীক্ষার ৬০ টাকার কাপড় লওয়া হইয়াছিল।” “প্রশ্ন উঠিল—কাপড় লওয়া যায় কি প্রকারে? তিনি বলিলেন—মুটে ভাড়া দিয়া অনর্থক দাম বাড়াইয়া কাজ নাই। এই বলিয়া নিজেই মোট মাথায় তুলিয়া লইলেন।” “তাহার দৃষ্টান্তে সকলে স্বদেশের নামে কৰ্ম্মব্রত গ্রহণ করিলেন, —দলে দলে যুবকগণ এই গৌরবময় কাজের জন্য সৰ্ব্বস্বত্যাগ করিয়া ছুটিয়া আসিলেন।”১২৮ রমাকান্তের কৰ্ম্মময় জীবন যৌবনেই পর্যবসিত হয়, বিগত ১৯০৬ খৃঃ জুর রোগে রানীগঞ্জে তিনি মৃত্যুমুখে পতিত হন। মৃত্যুর কিছুকাল পূৰ্ব্বে শিক্ষার্থ বিদেশগত চারজন ছাত্রের পাথেয় ব্যয় নিবাহাৰ্থ দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করিয়াছিলেন, পরে উহাদেরই আমেরিকায় শিক্ষার বহনার্থ মাফিক মাসিক আড়াই টাকায় হাজারিবাগে একটি কৰ্ম্মস্বীকার করেন। বেতনের টাকা হইতে নিজ ব্যয় সস্কুলনের জন্য মাত্র পঞ্চাশটি টাকা রাখিয়া বাকি দুইশত টাকা ছাত্রদের সাহায্যে পাঠাইয়া দিতেন। রমাকান্তের মৃত্যুতে কলিকাতার ন্যায় শ্রীহট্টের স্থানে স্থানে শোকসভা সম্মিলিত হইয়াছিল। রমানাথ বিশারদ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্তের ৩য় ভাঃ ৪ৰ্থ খঃ ৩য় অধ্যায়ে বেজোড়ার বিশারদ বংশের কথা প্রসঙ্গে উক্ত হইয়াছে। যে রমানাথ হইতে সেই বংশ “বিশারদের বংশ" বলিয়া খ্যাত হইয়াছে। রমানাথের পিতার নাম রতিদেব। রমানাথের বিদ্যা শিক্ষা নবদ্বীপে হইয়াছিল। রমানাথ অতুল প্রতিভাবলে অশেষ জ্ঞান বিজ্ঞানের অধিকারী হইয়া “বিশারদ" উপাধি লাভ করিয়াছিলেন ; কিন্তু ইহাই মাত্র তাহার মহিমা নহে, তিনি একজন প্রসিদ্ধ সিদ্ধ মহাপুরুষ ছিলেন, তাহার জীবনের বিবিধ অলৌকিক ঘটনা অসীম মাহায্যের পরিচায়ক । একবার তিনি অধ্যাপকগৃহ হইতে একা বাড়ীতে আসিবার কালে, কথিত আছে যে, মেঘনাতীরে উপস্থিত হইলে সন্ধ্যা হইয়া যায়, অন্ধকারে বৃষ্টিপাত হইতে থাকে, তদবস্থায় নদী পার হইবার সময়ে হঠাৎ তাহার সাধনবিষয়ক একখানি তন্ত্রগ্রন্থ মেঘনা নদীতে ডুবিয়া যায়। কোন অলৌকিক ক্ষমতাপ্রভাবে একটা প্রকাণ্ড কচ্ছপ তাহা পৃষ্ঠে লইয়া ফিরাইয়া দিয়া যায়। তিনি তাহার বংশ পরস্পরা “কচ্ছপ মাংস অভক্ষ্য" বলিয়া নিৰ্দ্ধারণ করেন। ১২৮. সঞ্জীবনী পত্রিকা—১৩১০ বাং ২৭ শে বৈশাখ এবং ১৩১৪ বাং ৩ রা জৈষ্ঠ্য। রমাকান্ত রায়ের প্রতিকৃতি “শ্রীহট্ট গৌরব চিত্রাবলীর” অন্যতম চিত্ররূপে সযত্নে রক্ষিত হইতেছে।