পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৫১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১১৮ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত চতুর্থ ভাগ বানিয়াচঙ্গের মহাদেব পঞ্চানন ও বিশারদের মধ্যে অত্যন্ত প্রণয় ছিল, এই ইতি যাহাতে চিরস্থায়ী হয়, উভয়েরই সেই ইচ্ছা ছিল, বিশারদের জৈষ্ঠ্যপুত্রের সহিত মহাদেবের কন্যার বিবাহ হওয়াতে উভয় পরিবারে ঘনিষ্টতা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। নব্য হইতেই অনেক ব্রাহ্মণ এবং বেজোড়ার চন্দ্র প্রভৃতি এ বংশের শিষ্য ছিলেন। পূৰ্ব্বে দেশে আসিলে আরও বহুব্রাহ্মণ শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। বিশারদের ইষ্টনিষ্ঠা অসাধারণ ছিল। দত্তবংশীয় তদীয় জনৈক শিষ্য যাহার নামে একটি তালুক করিয়া দিয়াছিলেন। একদা এই তালুকের রাজস্ব আদায় করিতে প্যাদা আসিলে তিনি ইহা জানিতে পারেন ও সেই তালুকের, স্বত্ব তৎক্ষণাৎ ত্যাগ করেন। প্রধান ধারণার ও পূজাচ্চনার পরিপন্থি ভূসম্পত্তিসহ তাহাকে সম্পর্কিত করায় সেই শিষ্যের প্রতি তিনি বিতুষ্ট হন ; কথিত আছে যে তাহাতেই না কি সেই ভদ্রলোকটি রক্ত বমন করিয়া প্রাণত্যাগ করেন। একজন সন্ন্যাসী বিশারদের নির্দিষ্টদিনে অকালমৃত্যুর কথা বলিয়া সতর্ক করিয়া দিয়াছিলেন। কিন্তু তখন বিশারদের জীবনান্ত হয় নাই। যে মহাপুরুষের অনুগ্রহ নানা সময়ে নানারূপে লোকের প্রভূত কল্যাণ সাধিত হইবে, তিনি অকালে কাল-কবলিত হইলে তাহাদের গতি কি হইত? যাহার ইঙ্গিতে অগণ্য শিষ্যমণ্ডলী আধ্যাত্মিক উন্নতি-পথে প্রধাবিত হইবে, দৈব্যপ্রেরিত হইয়াই তাহারে রক্ষা করিতে সন্ন্যাসী যথাকালে সমুপস্থিত হইবেন আশ্চৰ্য্য নহে। নিরূপিত দিনে বিশারদ মূৰ্ছিত হইয়া পড়িয়াছিলেন বলিয়া কথিত আছে। এই মূছাই হয়তঃ মৃত্যুরূপে পরিণত হইত, যদি তান্ত্রিক প্রক্রিয়া বলে তাহা নিরাকৃত না হইত ১২৯ তাই মূৰ্চ্ছাকেই সন্ন্যাসী অপমৃত্যু বলিয়া প্রকাশ করিয়াছিলেন। রাখাল শাহ রাখাল শাহ জাতিতে ধোপা ছিলেন, পূৰ্ব্বে তাহার অন্য কোন নাম ছিল কিনা জানা যায় না। তিনি সাধারণের কাছে পীর বা সিদ্ধপুরুষ বলিয়া গণ্য হইতেন। সম্ভবতঃ মোসলমানগণই তাহাকে “শাহ” নাম দিয়া থাকিবে। সুরমা নদীর তীরে কানাইঘাট স্থানে তিনি অবস্থিতি করিতেন। তাহার কাছে সৰ্ব্বদাই লোক যাইত এবং আপনাপন ইষ্টানিষ্ট জানিয়া আসিত, না; ভবিষ্যতে যাহার মঙ্গল হইবে, সামান্য হইলেও তাহার দ্রব্যেই গ্রহণ করিতেন, অন্যথায় বহুমূল্য বস্তুও ছুইতেন না। এই ইঙ্গিতেই সাধারণতঃ লোকে নিজের ইষ্টানিষ্ট বুঝিয়া লইত ও তাহার প্রত্যক্ষ প্রমাণ পাইত । একদা নরসিংহপুরের কয়েক ব্যক্তি তাহার কাছে গিয়াছিল, আরও লোক তথায় ছিল; ইহারা গেলে তিনি উঠিয়া গিয়া তন্মধ্যে এক ব্যক্তিকে "বেদম” প্রহার করিয়া সে ব্যক্তি দুইনল ১২৯. এরূপ ঘটনাও অবিশ্বাস্য বা অঘটনীয় না হইতে পারে। অনুরূপ একটি আধুনিক বৃত্তান্ত ১৩২০ বাংলার আষাঢ় মাসের "অলৌকিক রহস্য” নামক পত্রে প্রকাশিত হইয়াছে। উহা প্রায় ৪০ বৎসরের ঘটনা। বসুন্দিয়া বাসী শ্ৰীযুত বিধুভুষণ ঘোষ লিখিয়াছেন যে তাহার গুরুদবে অকালে একটি নির্দিষ্ট দিনে মৃত্যুমুখে পতিত হইবেন বলিয়া, সদিচ্চদানন্দস্বামীনামক জনৈক উপস্থিত হইলে, গুরুদেবকে সংযম করাইয়া একটি ঘরে জনৈক সতীর্থ সহ আবদ্ধ করিয়া রাখেন ও নিজে অন্য ঘরে প্রবিষ্ট হন এবং প্রাণান্ত ঘটিলেও প্রভাত হইবার পূৰ্ব্বে তাহার কাছে যেন কেহ না যায়, বলিয়া দেন। মধ্যরাত্রে গুরুর গাত্রে অতিমাত্র জ্বালা উপস্থিত হয়, প্রাণ যাইবার উপক্রম হয় কিন্তু গুরুর শত অনুরোধেও সতীর্থ স্বামীকে সে সংবাদ দিলেন না। এদিকে গুরু ছটফট করিতে করিতে নিজীবের ন্যায় পড়িয়া রহিলেন। প্রভাতে দ্বার উন্মুক্ত হইল, গুরুদেব উথিত হইলেন। তাহার বিশ্বাস যে স্বামীর সাধন প্রভাবে তিনি মৃত্যুমুখ রক্ষা পান। ৭/৮ বৎসর হইল, সে সতীর্থের মৃত্যু হইয়াছে।