পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৫২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জীবন বৃত্তান্ত শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ১২৩ রাম সীতার বিবাহ কথা সমাগত জনসমূহ এই আশ্চৰ্য্য ব্যাপার অবলোকনে বিস্ময়বিহবলচিত্তে বাবার জয় ঘোষণা করিতে লাগিল। বাবা শ্রীমূৰ্ত্তিকে আশ্রমে আনিয়া প্রাণ প্রতিষ্ঠাপূৰ্ব্বক পূজাদি দিলেন এবং মণিপুররাজ গম্ভীর সিংহের নিকট এই বৃত্তান্তঘটিত পত্র সহ লোক পাঠাইলেন। মহারাজ নির্দিষ্ট দিনে সীতা সহ আগমনের সম্মতি জানাইলে, বাবা ত্রিপুরেশ্বরকেও এই উৎসবে যোগদানের নিমন্ত্রণ করিলেন । কাৰ্ত্তিকমাসে রঘুনাথের উদ্ধার হয়, এই সময় হইতেই রাধাগোবিন্দের বিশেষ সাহায্যে উৎসবের অনুষ্ঠান চলিতে থাকে। মেলাস্থল, বিবাহ বাসর সভামণ্ডপ, রাজনিকেতন, ভৃত্যনিবাস, অভ্যাগত বাসস্থান, অশ্বশালা, বাদ্যাগার প্রভৃতি ঘাঘরাদীবীর চতুস্পার্শ্বে নিৰ্ম্মিত হইল। ঘোড়দৌড় ও পাতিখেলার স্থান পরিষ্কার, কদলীবৃক্ষ-সারি রোপন ও ধ্বজা উত্তোলন প্রভৃতি সম্পন্ন হইল, অপরিমিত খাদ্যদ্রব্যে ভাণ্ডার পরিপূরিত হইল। সন্নিকটবৰ্ত্তী গ্রাম সমূহের ব্রাহ্মণগণ উৎসাহের সহিত ব্যাপারে যোগ দিলেন। নানাস্থানের নিমন্ত্রিত ও দর্শকসমূহে খেলাস্থল পূর্ণ হইয়া গেল । মাঘ মাসে বিবাহের দিন নির্দিষ্ট হয়। ব্যাপারের ৩ দিন পূৰ্ব্বে মণিপুরপতি সীতাসহ লোকজন সমভিব্যবহারে উপনীত হইলেন। ত্রিপুরেশ্বর বহু সৈন্য সহ আসিতে উদ্যত হন, কিন্তু সসৈন্যে আসিতে গবৰ্ণমেন্ট কর্তৃক বারিত হওয়ায় তিনি স্বীয় মন্ত্রীকে নিমন্ত্রণ রক্ষার্থে প্রেরণ করেন । বিবাহের দিন যথারীতি ব্রাহ্মণাদি ভোজন সমাপন হইলে নানাবিধ আমোদ প্রমোদ সম্পন্ন হয়। রাত্রে বিবাহের প্রাক্কালে অগ্নিক্রীড়া প্রদর্শন, আলোকমালা প্রজ্জ্বালন এবং সংকীৰ্ত্তন আরম্ভ হইল; ধূপ ধুনা জুলিয়া দিক আমোদিত হইল এবং শঙ্খ করতাল, মৃদঙ্গধানির মধ্যে মণিপুরপতি সীতাসহ বিবাহমণ্ডপে উপস্থিত হইলেন। সিদ্ধবাবা তখন রামকে বুকে তুলিয়া দাড়াইলেন এবং অপর এক সন্ন্যাসী সীতাকে হস্ততলে তুলিয়া সপ্ত প্রদক্ষিণ সম্পন্ন করিলেন। মণিপুরপতি কন্যাদানের দক্ষিণাস্বরূপ সুবর্ণ-নিৰ্ম্মিত গুবাক ও কদলী কয়েকটি প্রদান করিলেন। বিবাহের পরদিন ঘোড়দৌড় পাতিখেলা প্রভৃতি আমোদ ও শাস্ত্রবিচার এবং ব্রাহ্মণের ভুরিভোজন সম্পন্ন হইল; তাহার পরদিন ত্রিপুররাজমন্ত্রী এবং মণিপুরপতি স্ব স্ব রাজ্যে গমন করিলেন। মহারাজের বস্ত্রাবাস হইতে লঙ্গাই নদী পর্যন্ত পূৰ্ব্বমুখে গমনপথের উভয় পার্শ্বে কদলী বৃক্ষের সারি রোপিত হইয়াছিল। মহারাজ অশ্বারোহণে গমনকালে উভয় হাতে উলঙ্গ তরবারি ধরিয়া আশ্চৰ্য্য কৌশলে কদলী সারি দ্বিখণ্ডিত করিয়া গিয়াছিলেন; তাহার যাইবার বহু সময় পরে বাতাস বহিতে আরম্ভ হইলে একসঙ্গে সেই কদলী বৃক্ষ শ্রেণী ভূপাতিত হইয়া যায়। ইহার পরও উৎসব সপ্তাহ কাল স্থায়ী হয়, তাহার পরে সিদ্ধবাবা সাহায্যকারী ব্যক্তিবর্গকে আশীৰ্বাদ করিয়া তীর্থভ্রমণে বহির্গত হইতে চাহেন। সিদ্ধ বাবা রাধাগোবিন্দের আগ্রহে বাধা না দিয়া তাহাকে সঙ্গে লইয়াছিলেন। তাহারা প্রথমে চন্দ্রনাথ তীর্থে উপস্থিত হন; তৎপরে কোন কোন স্থানে গমন করিয়াছিলেন, তাহা জানা যায় নাই; রাধা গোবিন্দও তাহা প্রকাশ করেন নাই। এক বৎসর পর রাধা গোবিন্দ বাটীতে প্রত্যাগমন তুম্‌ চলে আও" এই ধ্বনি হঠাৎ সকলে শুনিতে পাইয়া চমকিত হয়; এই ধ্বনি সিদ্ধ বাবার ডাকের মত শুনা গিয়াছিল। সিদ্ধ বাবার আকৃতি, অপরিমিত অর্থব্যয়ের প্রকার এবং মণিপুরপতি ও ত্রিপুরাজ্যের সহিত তদ্বিধ পরিচয় ইত্যাদি আলোচনায় অনেকের অনুমান যে ইনি কোনও রাজবংশীয় ব্যক্তি ছিলেন। (দত্তগ্রামবাসী শ্ৰীযুত মথুরামোহন দত্ত পুরকায়স্থ মহাশয় হইতে এই বিবরণ প্রাপ্ত হওয়া গিয়াছে।)