পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৫২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১২৪ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত চতুর্থ ভাগ রাধানাথ চৌধুরী করিমগঞ্জের অন্তর্গত আগিয়ারামের কাকুরা গ্রামের প্রসিদ্ধ ব্রাহ্মণ পরিবারে দেবীপ্রসাদ এক প্রসিদ্ধ ব্যক্তি ছিলেন, তাহার পুত্রের নাম গৌরীপ্রসাদ, রাধানাথ ইহারই পুত্র। ১৮৫৬ খৃঃ রাধানাথ জন্মগ্রহণ করেন। রাধানাথ গ্রাম্য পাঠশালে কিঞ্চিৎ বাংলা ভাষা শিক্ষা করিয়া পঞ্চদশবর্ষ বয়ক্রম কালে, ইংরেজী শিক্ষার জন্য শিলচর হাইস্কুলে গমন করেন। তদীয় জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা গোপালকৃষ্ণ তথাকার একটি চা-বাগানে কেরাণীর কৰ্ম্ম করিতেন, তিনিই কোন প্রকারে রাধানাথের খরচ যোগাইতেন। দুর্ভাগ্য বশতঃ একটি সামান্য কারণে তিনি কৰ্ম্মচ্যুত হওয়ায়, রাধানাথের শিলচরবাসের পথ রুদ্ধ হইয়া উঠে, রাধানাথ স্বয়ং বহু চেষ্টা করিয়া বিফল মনোরথ হইলেন। রাধানাথ নিরুপায় হইয়া তখন শ্রীহট্টে উপস্থিত হইলেন ও কোনপ্রকার এখানে থাকিতে পারেন কি না, চেষ্টা করিতে লাগিলেন। তাহার চেষ্টা ফলবতী হইল। খ্যাতনামা উকিল স্বগীয় কৈলাস চন্দ্র ঘোষের আশ্রয়ে তিনি শ্রীহট্টে থাকিতে পারিলেন বলিয়া সুখী হইলেন। তিনি রন্ধনাদি করিয়া সকলকে খাওয়াইয়া যে একটু সময় পাইতেন, তাহাতেই স্কুলের নির্দিষ্ট পাঠ অভ্যাস করিতেন, এইরূপে ২১ বৎসর বয়সে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়া ১০ টাকা বৃত্তি প্রাপ্ত হন (১৮৭৬ খৃঃ) । বৃত্তি পাইয়া তিনি কলিকাতায় গিয়া মেট্ৰপলিটান ইনষ্টিটিউশনে ভৰ্ত্তি হন। যে দুই বৎসর বৃত্তি ছিল, এই বিদ্যালয়েই সুখ্যাতির সহিত অধ্যয়ন করেন। তাহার পর কলিকাতায় থাকার তাহার কোন সুবিধাই হইল না, তখন বিমৰ্ষভাবে কলিকাতা ত্যাগ করিয়া রাধানাথকে আসিতে হইল; পড়িবার সুযোগ ঘটিল না বলিয়া রাধানাথ বড়ই দুঃখিত হইলেন, মনে মনে সঙ্কল্প করিলেন যে যতদিন বাচিবেন—দেশের দরিদ্র ছাত্রদের পাঠের অসুবিধা দূরীভূত করিতে চেষ্টা করিবেন। বলিতে ভুলিয়াছি যে তিনি কলিকাতায় থাকাকালেই কলিকাতা প্রবাসী শ্রীহট্টের মনস্বী ছাত্রবৃন্দ কর্তৃক স্ত্রীশিক্ষাবিধায়িনী “শ্রীহট্টসম্মিলনী" প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠাতৃবর্গ মধ্যে রাধানাথ অন্যতম ছিলেন। সরল মনে কোন জনহিত-জনক শুভ সঙ্কল্প করিলে মঙ্গলময় ভগবানই সে সৎকার্যের সহায় হইয়া থাকেন। রাধানাথ যখন শ্রীহট্টে আগমন করেন, তখন “মুফতি" স্কুল নামক শ্রীহট্টের একটি ইংরেজী বিদ্যালয়ে উঠিয়া যাইতেছিল, রাধানাথের সতীর্থ স্বদেশবৎসল শ্ৰীযুত বিপিনচন্দ্র পাল ও শ্ৰীযুত রাজ চন্দ্র চৌধুরী তৎকালে শ্রীহট্টে সমুপস্থিত হইয়া (১৮৮০ খৃঃ ৫ই জানুয়ারীতে) মুফতি স্কুলের ছাত্রবর্গ লইয়া “শ্রীহট্ট নেশনেল স্কুল” স্থাপন করেন। বিপিন বাবুর উদ্যোগে এই সময়ে “পরিদর্শক” নামক সংবাদপত্র প্রচারিত হইতে আরম্ভ হয়। তিন মাস কাল মধ্যেই স্কুলের ছাত্র সংখ্যা ২৫০ জন হয়, এই ভাবে কিছুকাল স্কুল পরিচালনা করিল নিঃসম্বল যুবকদের অর্থাভাব উপস্থিত হইল, কিন্তু তাহাদের “মন্ত্রের সাধন কিম্বা শরীর পতন” পণ ছিল। কঠোর পরিশ্রমে কিছুকাল মধ্যেই বিপিন বাবুর স্বাস্থ্য ভঙ্গ হওয়ায় তিনি কলিকাতা যাইতে বাধ্য হইলেন; অপরেরাও তাহার অনুসরণ করিতে উদ্যত হন; যখন স্কুলের অবস্থা এইরূপ শঙ্কটাপন্ন, সেই সময়েই মহাপ্রাণ রাধানাথ কপর্দক শূন্য নিঃসম্বল হইলেও অগ্রসর হইলেন ও এই দুইটি ব্যয়সাধ্য গুরুভার স্বইচ্ছায় নিজ মাথায় তুলিয়া লইলেন। কিন্তু অর্থাভাবে অচিরেই তাহাকে বিপন্ন হইতে হইল, তখন “দেশ হিতৈষণায় সমধিক অগ্ৰণী” স্বগীয় জয়গোবিন্দ সোম মহাশয়ের উপদেশ ও সাহায্য তিনি বিশেষ উপকৃত হন। জয়বাবু কলিকাতা হইতে দুইজন উপযুক্ত শিক্ষক প্রেরণ করিলেন, রাধানাথ বাবু স্বয়ং ২য় শিক্ষকের কার্য্য গ্রহণ করেন। তদ্ব্যতীত জয়বাবুর জ্যেষ্ঠভ্রাতা রেভারেণ্ড সনাতন সোমও