পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৪৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুর্থ ভাগ 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ৩০ অভিপ্রায় ব্যক্ত করে; তাহার বাক্য শ্রবণে তিনি আপনাকে “ফকির” বলিয়া পরিচয়-দেন। তখন সে রমণী আহ্লাদ ভরে তাঁহাকে দুখানা পিষ্টক প্রদান করে, তিনিও পিষ্টকদ্বয় গ্রহণ পূৰ্ব্বক পরে তাহা খাইবেন বলিয়া তাহাকে প্রবোধ দিয়া আপন ঝুলিতে তুলিয়া রাখেন। এই সময় দেওয়ানের বিশ্বাস উপাধিধারী জনৈক ব্রাহ্মণ কৰ্ম্মচারী সেই গ্রামে ছিলেন; তিনি ইহা জানিতে পারিয়া কেশবলালকে দেওয়ানের কাছে লইয়া গেলেন। দেওয়ান উমেদরাজা মোসলমান হইলেও হিন্দু ধৰ্ম্মে তাহার বিদ্বেষ ছিল না; প্রকৃত ধাৰ্ম্মিক ব্যক্তির প্রতি তিনি শ্রদ্ধাবান ছিলেন। তিনি কেশবলালকে যবনীপৃষ্ট পিষ্টক গ্রহণের কারণ জিজ্ঞাসিলে, তিনি আপনাকে “ফকির” বলিয়াই উত্তর দিলেন। দেওয়ান তখন তাহাকে নিজ গৃহের প্রস্তুত “খানা” খাইতে বলিলেন ও খানা আনিতে ভৃত্যকে আদেশ দিলেন; তখন কেশবলাল ঠাকুরবাণীকে স্মরণ করিয়া একটি গীত গাইলেন, সে গীতটা এই ৪— 爱 “মুই কেন আইনু দেওয়ানের বাজারে রে বাণী নাথ! নদীর কুলে নগর, ফকিরের যুগান কেন মানীরে বাণী নাথ! মুই কেন আইনু দেওয়ানের বাজারে। বসিয়াছে ভবেরি হাট, যার যার কাজে তারি ঠাট, তাহাতে বেপারির কারখানা। হরির নামের লাগিয়া কেশবলাল বাডলারে বানী নাথ ! মুই কেন আইনু দেওয়ানের বাজারে।” এই গীতে র্তাহার পবিচয় হইয়া গেল। তিনি যে ফকির নহেন—হিন্দু উদাসীন তাহা জানা গেল; খানা আর আসিল না। ইনি যে জনতরির নিরুদ্দিষ্ট পূৰ্ব্বসিদ্ধ বালক, তাহাও জানা গেল। দেওয়ান তখন র্তাহাকে বাড়ী পাঠাইতে উদ্যোগ করিলেন ও ভূমিদান করিতে চাহিলেন। কেশব দান গ্রহণে অস্বীকৃত হইলেন, বলিলেন— “জমি ভূমি দোলা ঘোড়া রহুক পড়িয়া। দেশে দেশে মাগি খাইমু গোবিন্দের নাম লইয়া।” কিন্তু দেওয়ান কোনরূপেই ছাড়িলেন না, তখন তিনি সেই গোচারণের জঙ্গলটুকু মাত্র গ্রহণে ও একবার মাত্র গৃহ গমনে স্বীকৃত হইলেন। বহুদিনে মায়ের ছেলে ঘরে গেল, বহুদিনে রতিনাথের শূন্য ঘর আলো হইল, বহু দিন পরে তাহার জননী হারানিধি প্রাপ্ত হইলেন। হায়! তাহার পিতা কোথায় ? তিনি যে পুত্ৰশোকে শুকাইয়া বহু দিন পূৰ্ব্বেই দেহত্যাগ করিয়াছেন। জননী পুত্র কোলে করিয়া কাদিতে লাগিলেন। করুণ হৃদয় কেশবলাল মার সে ক্ৰন্দনের মৰ্ম্ম বুঝিলেন বলিলেন—“মা, আর কাদিও না, আমি তোমার জন্য গৃহী হইলাম।”