পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৪৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৫ জীবন বৃত্তান্ত 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত যাহার হৃদয়ের সেই ভুবন মোহনের রূপে ভুবন ভরিয়া গিয়াছে। বঞ্চিত চক্ষু মুছিলেন, পুনঃ চাহিলেন, তবু সেইরূপ, চক্ষের সমক্ষে সেই বিদ্যুদাম বিজরী তেজোমণ্ডিত নব নীরদকান্তি অপূৰ্ব্ব মূৰ্ত্তি। বালকের মাথা ঘুরিয়া গেল, বুদ্ধি বিলুপ্ত হইল, বঞ্চিত আর ঠিক থাকিতে পারিলেন না, ছিন্নমূল পাদপের ন্যায় মূচ্ছিত হইয়া ভূপতিত হইলেন। যখন তাহার মূৰ্চ্ছাভঙ্গ হইল, তখন দিবা অবসান হইয়াছে, রবি অস্তাচল চুড়া অবলম্বন করিয়াছেন। কিন্তু আজ বনভূমির উপর দিয়া এক অপূৰ্ব্ব বন্যা যেন চলিয়া গিয়াছে, এ স্থলের সকলই যেন কি এক ইন্দ্রজাল বশে আশ্চৰ্য্য ভাবাপন্ন হইয়া উঠিয়াছে। বঞ্চিতের শীর্ষদেশে তরুশাখে বসিয়া তখন পর্যন্ত কোকিল পঞ্চম কণ্ঠে মধু বর্ষণ হিংসা ভুলিয়া তাহার চতুষ্পার্শ্বে নৃত্য করিতেছে। বঞ্চিতের তখন স্পষ্ট জ্ঞান হইয়াছে, বঞ্চিত বুঝিলেন যে, তিনি যে অনুরূপ দুর্লভ রূপ দর্শন করিয়াছেন, তাহা চক্ষের ভ্রম দৃষ্টি নহে, তাহা মস্তক বিকৃতির ফল নহে—ব্রুব সত্য; তাহা না হইলে এই বনস্থলে বৃন্দাবনের ভাব ফুটিয়া উঠিবে কেন? ব্যাঘ্র্যাদি পশু হিংসা বৃত্তি ভুলিয়া চাহিয়া থাকিবে কেন ? বঞ্চিত আর তখন অজ্ঞ বালক নহেন—তাহার হৃদয়ে “পূৰ্ব্বসিদ্ধ” জ্ঞানের উদয় হইয়াছে। প্রথমেই তাহার মনে দেশের ধৰ্ম্ম দরিদ্রের কথা জাগিল, হায়! দেশের লোক অবস্তুকে বস্তু জ্ঞান করিয়া কি মোহেই মত্ত রহিয়াছে, বঞ্চিত আর বনে থাকিতে পারিলেন না,—লোকালয়ে—গৃহে চলিলেন। কথিত আছে যে, একটি ভীষণ ব্যাঘ্ৰ বঞ্চিতের অনুসরণ করিয়াছিল; যখন বনভূমি উত্তীর্ণ হইয়া বঞ্চিত লোকালয়ে উপস্থিত হন, তাহার পাছে পাছে কুকুরের মত একটা ভীষণ ব্যাঘ্ৰ আসিতেছে দেখিয়া লোকে বিস্মিত হয় ও তাহাকে সিদ্ধ পুরুষ বলিয়া জ্ঞান করে। বঞ্চিত বাড়ীতে পৌছিলে অনেকেই তাহাকে দেখিতে আসে; বহুজন সমাগম দৃষ্টে ব্যাঘ্রটি বিদ্যুৎ বেগে ধাবিত হইয়া বনে চলিয়া যায়। ব্যাঘ্রটিকে বঞ্চিত আনিয়াছিলেন বলা যাইতে পারে; কোন মহাশক্তি পরিচালিত হইয়া ভীষণ পশুটি বঞ্চিতকে বাড়ী পৌছাইয়া দিয়া গেল, কে জানে ? বঞ্চিত গৃহে আসিলেন, গ্রামে কোলাহল উপস্থিত হইল, শত শত লোক লোকালয়ে। সমবেত হইয়া হরিধবনি দিতে লাগিল, মুহুৰ্ত্তে মধ্যে সংকীৰ্ত্তনে গ্রাম মুখরিত হইয়া উঠিল, বঞ্চিত বলিতে লাগিলেন। 象 “হরে কৃষ্ণ রাম নিত্য গুণ ধাম, মনে রাইখ অবিরাম। অনিত্য বিষষ সুখের লাগিয়া কেনবা ছাড়হ নাম। বঞ্চিত বঞ্চিত ঘোষে।”