পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/৫৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৬১ উপসংহার 0 শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত অদ্বৈতের কত কথাই মনে হইত, আতুড় ঘরে যখন সস্ত্রীক আচার্য শিশু-নিমাইকে দর্শন করেন, তখন হইতেই তাহার মনে এই ভাবের উদয় হয়; অদ্বৈত ভাবিতেন “ইনিই কি তিনি?” ফলে নিমাইকে তিনি প্রাণাধিক ভালবাসিতেন। নিমাই পাড়ার বালকদল লইয়া বাড়ীর ধারে পথে গিয়া কখন কখন নাচিতেন ও গান গাইতেন। কখন কখন ইহাতে বড়ই রঙ্গ হইত, দেখিতে পথের লোক কখন দাঁড়াইত ও কি জানি কি মোহবশে অজ্ঞাতভাবে তাহারাও বালকের সহিত নৃত্য যুড়িয়া দিত। পরে অন্য নুতন পথিক লোক দেখিলে তাহাদের চমক ভাঙ্গিত—-জ্ঞান হইত ও তখন তাহারা লজ্জিত হইয়া তাড়াতাড়ি তথা হইতে পলাইয়া যাহত। এই সময়ে নিমাইর বয়স ছয় বৎসরের বেশী ছিল না, জগন্নাথ মিশ্র এই সময় বিশ্বরূপকে বিবাহ দিতে ইচ্ছা করেন। বিশ্বরূপ তাহা জানতে পারিয়া নিজ মামাত ভাই লোকনাথকে সঙ্গে লইয়া একদা রাত্রিযোগে পলায়ন করিয়া যান, ও শীঘ্রই উভয়ে সন্ন্যাস গ্রহণ কবেন। নিমাই ভ্রাতৃবিরহে বড় ম্ৰিয়মান হইয়া পড়েন। তথাপি মাতার ক্ৰন্দন দেখিয়া বালক যখন বলিয়াছিল “মা, আমি ত তোমার রহিলাম, দাদার জন্য তুমি কাদিও না।” তখন যথার্থই মাতাপিতার দুঃখ দূর হইয়াছিল। জগন্নাথ মিশ্র স্থির হইয়া, পুত্র বিশ্বরূপ যে পথে গিয়াছেন, সে পথ হইতে যেন প্রত্যাবৃত্ত না হন, যেন ধৰ্ম্ম নষ্ট করিয়া গৃহে না ফিরেন এইজন্য ভগবানের কাছে প্রার্থনা করিলেন ! ধৰ্ম্মপ্রাণ এমন পিতামাতা নহিলে নিমাইর ন্যায় পুত্র জন্মেন না। নিমাইর যথাকালে উপনয়ন হয় তাহার পর জুরবোগে জগন্নাথ মিশ্রের পরলোক গমন ঘটে । নিমাই যথারীতি বাপের শ্রাদ্ধ করেন। এই সময় হইতে নিমাই কিছু গম্ভীর হন, চঞ্চল বালকদল সহ আর খেলিয়া বেড়াইতেন না। অধ্যয়নাদি জ্ঞানোলোচনার ফলে বিশ্বরূপ সন্ন্যাস গ্রহণ করিয়াছেন, এই মনে করিয়া জগন্নাথ মিশ্র ভয়ে নিমাইর পাঠ বন্ধ করিয়া দিয়াছিলেন। পতির মৃত্যুর পর শচীদেবী পুত্রকে পুনরায় টোলে পাঠাইয়া দেন। গঙ্গাদাস আচাৰ্য্য নামক পণ্ডিতের কাছে নিমাই সাহিত্য ও ব্যাকরণ শিক্ষা করেন। তৎপরে আপনাদের পুরোহিত বিষ্ণু মিশ্রের নিকট স্মৃতি ও জ্যোতির শাস্ত্র পাঠ করেন। তাহার পর সুদর্শন পণ্ডিতের নিকট দর্শন শাস্ত্র অধ্যয়ন করেন; দুই বৎসরে তাহার ইহা সমাপ্তি হয়। তাহার পর অল্প কিছু কাল ন্যায়শাস্ত্র অধ্যয়ন করেন। নবদ্বীপের বাসুদেব সাৰ্ব্বভৌম মিথিলায় ন্যায় অধ্যয়ন করিয়া নবদ্বীপে আসিয়া ন্যায়ের এক টোল স্থাপন করেন; সাৰ্ব্বভৌমের টোলে শ্রীহট্টবাসী রঘুনন্দন প্রভৃতি পড়িতেন, নিমাইও অল্পদিনমাত্র পড়িয়াছিলেন। নিমাই ন্যায় অধ্যয়ন কালে ন্যায়ের এক টীকা লিখিয়াছিলেন, রঘুনাথও ঐ সময় তাহার প্রসিদ্ধ ন্যায়-গ্রন্থ প্রণয়ন করেন। রঘুনাথ নিমাইর প্রতিভার পরিচয় পাইয়াছিলেন। তিনি ৩ “ইচ্ছামাত্র লোকনাথ আসিয়া মিলিল। তরে নিয়া বিশ্বকাপ দক্ষিণ দেশ গেল।—প্রেমবিলাস।