পাতা:সময় অসময় নিঃসময় - তপোধীর ভট্টাচার্য.pdf/১৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

তাঁর ইচ্ছা। কিন্তু বিস্ফোরণের প্রতিক্রিয়া এই হতে পারে যে আসগরের ভেতর থেকে অন্য আরেক আসগর বেরিয়ে আসতে পারে। কেননা ‘যুগলবন্দি’র পরাপাঠ এই যে ‘Things are not what they seem!' যেহেতু অন্য উপায় নেই, শ্লেষ দিয়েই নির্মোক উন্মোচনের ইশারা করেছেন ইলিয়াস।

 অতএব বৌয়ের কাছে নাজেহাল জাঁদরেল অফিসারের কথা ভেবে ‘আসগর এতটা দুঃখিত হয় যে তার দুঃখ নিজেই বরণ করে নেওয়ার জন্যে ব্যাকুল হয়ে ওঠে। এ ধরনের দুঃখকষ্ট ভোগ করার কপাল যে তার কবে হবে! এ এক ধরনের বয়ান। আরেকটি ধরন লক্ষ করি এসব অভিব্যক্তিতে: ‘কুশনঢাকা মোড়ায় বসে বসেই আসগর অ্যাটেনশন হয়। একই সঙ্গে অভিভূত চোখে তাকায়, সায়েব কীরকম পোলাইট, কী তার এটিকেট!’ নিজেকে খেদমতগার হিসেবে তৈরি করতে গিয়ে তার ব্যক্তিত্ব বলে কিছু নেই আর। পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় যারা উচ্ছিষ্টজীবী, তাদের জন্যে পূর্বনির্ধারিত ছাঁচের চেয়ে বড়ো কোনো সত্য নেই। নেই কোনো পৌর্বাপর্যও। অভীষ্ট সিদ্ধির জন্যে মরিয়া বলেই আসগর যেন জ্যামুক্ত তীরের মতো সারোয়ারের মনোরঞ্জনের প্রতি ধাবমান। এইজন্যে ‘কবির ভাই, বলে ডাকলেও তার কোনো অর্ডার ক্যারি আউট করার সময় আসগর স্যার বলতেই বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করে। রাতদুপুরে মদে টইটুম্বুর জেসমিন ফ্যাট বাড়াতে চায় না বলে কমলালেবু খেতে চায়; সরোয়ার স্ত্রীর ইচ্ছাপূরণ করতে ব্যর্থ। সুতরাং আসগরকে গাড়ি নিয়ে বেরোতেই হয়। কিন্তু তার আগে বয়ানের চাপা শ্লেষ সতর্ক পাঠক লক্ষ করেন নিশ্চয়:

 ‘আপেল খেলে হয় না?' জিগ্যেস করেই আসগরের ভয় হয় যে এই কথায় সরোয়ার কবির তাকে কর্মবিমুখ অলস ও অপদার্থ যুবক হিসাবে চিহ্নিত না করে। সঙ্গে সঙ্গে তাই একটু মেরামত করতে হয়, ‘রাত্রে কমলালেবু খেলে অনেক সময় এ্যাসিড হতে পারে।

 ‘আপেল থেকেই বরং এ্যাসিড হওয়ার চান্স বেশি। এরপর কলা সম্বন্ধে পরামর্শ দেওয়াটা রিস্কি। আর এদের সোসাইটিতে কলার পজিশনও ওর কাছে স্পষ্ট নয়।

 সোফায় মাথা এলিয়ে দিয়ে সরোয়ার কবির বলে, ‘শি ওয়াণ্টস অরেঞ্জ। ইট হেল্পস হার টু রিডিউস হার ওয়েট। টক তো চর্বিনাশক।

 ‘জি, টক সব সময় চর্বিনাশক। সরোয়ার কবিরের ইংরেজির মতো তার কঠিন কঠিন বাঙলা কথাও রপ্ত করার জন্য আসগর সদা সচেতন।

 অর্থাৎ এখানে স্পষ্ট যে খাদ্যাভ্যাসে এবং ব্যবহারে শ্রেণীবাস্তবতা উপস্থিত। আর, বুঝতে পারি যথাপ্রাপ্ত অবস্থানের সীমাবদ্ধতা কত অনতিক্রম্য। আসগরের নড়বড়ে অবস্থানই তাকে করুণ জীবে পরিণত করেছে। আরো একটি বিষয় লক্ষণীয়। গল্পকার সরোয়ার কবিরের পুরো নামটা ব্যবহার করছেন, কিন্তু আসগর শুধুই আসগর। বদান্যতা বিতরণ করে বলেই কি প্রথমোক্ত জন পূর্ণাঙ্গ এবং ভিখিরিতুল্য গ্রহীতা বলে আসগর হোসেনের নাম সংক্ষিপ্ত ভাবে ব্যবহৃত হয়েছে? বস্তুত শেষোক্ত জন তো কুকুরের সঙ্গে ব্যবহারেও স্বাধীন নয়। নিচের অংশটি লক্ষ করা যাক:‘গাড়ি

১৭১