পাতা:সময় অসময় নিঃসময় - তপোধীর ভট্টাচার্য.pdf/১৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

হিসেবে হিজড়ে পল্লীর বিয়ে, সরকারি প্রতিবেদনে সমকামিতার বৈধীকরণ প্রক্রিয়া, চিন ও পাকিস্তানের সঙ্গে কভি খুশি কভি গম জাতীয় কূটনৈতিক খেলাধুলো, ক্রিকেটীয় জাতীয়তাবাদের তুমুল উত্থান এবং এ জাতীয় অন্য সব কাল-চিহ্নগুলি আমাদের সমকালকে অজস্র বুদবুদের সমাহার করে তুলেছে।

 এই নৈরাজ্যময় মহোৎসবের মধ্যে কবিতা লেখা হচ্ছে, পড়াও হচ্ছে; রচিত হচ্ছে। ‘ইউজ অ্যাণ্ড থ্রো’ নীতির অনুসারী উপন্যাস নামক ভস্মীভূত অভ্যাসের কঙ্কাল। এইসব পড়ার ভান করতে করতে স্মৃতিলুপ্ত প্রজন্ম বোেকাবাক্সের মোহিনীমায়ায় বুদ হয়ে সা রে গা মা পা এবং সেই জাতীয় আরও অনেক নির্বোধ স্থূলতা, ভাঁড়ামি ও ইতরতার প্রদর্শনী থেকে শিখে নিচ্ছে নয়া প্রাদেশিকতা, আবার পাশাপাশি মেনে নিচ্ছে অভ্যন্তরীন ভাষিক সাম্রাজ্যবাদের নাগপাশও। হ্যা, এখন সত্যিই চারদিকে দেখতে পাই, শিশুর কাঁধে মড়ার পালকি ছুটে চলেছে নিমতলায় এবং উত্তাল হয়ে উঠেছে বুড়োবুড়িদের লম্বালম্বি বাসরঘরী নাচ! তাই এখনই তো সেই সময় যখন এ-পাশে মায়ের মৃতদেহ এবং ওপাশে বাবার মৃতদেহ নিয়ে ছিন্নমূল ও লক্ষ্যহীন নবীন প্রজন্ম, মাঝখানে রয়েছে যেন ন যযৌ ন তস্থেী। তার না আছে কোনো যাত্রা, না আছে কোনো গন্তব্য। একমাত্র কোনো কবিই দেখতে পান ঘটনা-সংস্থানের অন্তর্বর্তী চিহ্নায়নের তাৎপর্য। আর, লেখেন:

‘এ পাশে তার মা, ও পাশে তার বাবা
সে জানে না আজ তার জন্মদিন
সে আর বাবার দিকে তাকিয়ে নেই
সে তার মায়ের দিকে আর তাকাচ্ছে না
সে তাকিয়ে আছে পুলিশের দিকে
সে তাকিয়ে আছে আমার দিকে,আমার দিকে
তোমার, তোমার, তোমার দিকে
কিন্তু আমি আর তাকাতে পারছি না ছেলেটার চোখে
যিশুর চোখের মতো চোখ, ছেলেটার আজ জন্মদিন
সবুজ প্রজাপতি হলুদ প্রজাপতি লাল প্রজাপতি
প্রজাপতিগুলো সব গেল কোথায়?

 যেমন কোনো কোনো সকাল রাতের চেয়েও ভয়ঙ্কর, তেমনই এই প্রশ্নের মুখোমুখি নিরুত্তর হয়ে থাকি। ভাবি, প্রত্যুত্তরযোগ্যতা সত্যিই কি আছে আমাদের? পিকাসো যেমন বলেছিলেন, কবিতার এই বিপন্ন শিশুটি কি গণহত্যা ও আর ডি এক্স-এর বিস্ফোরণে কণ্টকিত পৃথিবীতে দাঁড়িয়ে পুলিশ ও বন্দুকের দিকে ছুঁড়ে দিতে পারবে এক মুঠো গোলাপের পাপড়ি? গ্যেনিকার ফ্যাসিবাদী হিংস্রতা থেকে বাহাত্তর বছর পরে আমরা কি আরও নিষ্ঠুর জান্তব ঘাতক সময়ের অভিব্যক্তি দেখছি না? দর্শন-সাহিত্য-

১৭৮