পাতা:সরীসৃপ - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩১
মমতাদি

হয়ে পড়ল। পিড়িতে বসামাত্র খোঁপা খুলে পিঠ ভাসিয়ে একরাশি চুল মেঝে পর্য্যন্ত ছড়িয়ে পড়ল, কি একটা অন্ধকার রহস্যের আড়ালে সে যেন নিজেকে লুকিয়ে ফেলল।

 রহস্য বৈকি। গালে চড়ের দাগ, চিরদিন যে ধৈর্য্যময়ী ও শান্ত তার ব্যাকুল কাতরতা, ফিসফিস ক’রে ছােট ছেলেকে শােনানাে; কারও কাছে যা পাইনা তুমি তা দেবে কেন? বুদ্ধির পরিমাণের তুলনায় এর চেয়ে বড় রহস্য আমার জীবনে কখনাে দেখা দেয়নি! ভেবে চিন্তে আমি তার চুলগুলি নিয়ে বেণী পাকাবার চেষ্টা আরম্ভ ক’রে দিলাম। আমার আশা পূর্ণ হল, সে মুখ ফিরিয়ে হেসে রহস্যের ঘােমটা খুলে সহজ মানুষ হয়ে গেল।

 বিকালে আমি জিজ্ঞাসা করলাম, আচ্ছা, তােমার বরের চাকরী হলে তুমি কি করবে?

 তুমি কি করতে বল? হরিরলুট দেব? না, তােমায় সন্দেশ খাওয়াব?

 ধেৎ, তা বলছি না। তােমার বরের চাকরী নেই ব’লে আমাদের বাড়ী কাজ করছ তাে, চাকরী হলে করবেনা?

 সে হাসল, করব। এখন করছি যে!

 তােমার বরের চাকরী হয়েছে?

 হয়েছে, বলে সে গম্ভীর হয়ে গেল।

 আহা, স্বামীর চাকরী নেই ব’লে ভদ্রলােকের মেয়ে কষ্টে পড়েচে, পাড়ার মহিলাদের কাছে মার এই মন্তব্য শুনে মমতাদির বরের চাকরীর জন্য আমি দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে উঠেছিলাম। তার চাকরী হয়েছে শুনে পুলকিত হয়ে মাকে সংবাদটা শুনিয়ে দিলাম।

 মা তাকে ডেকে পাঠালেন, তােমার স্বামীর চাকরী হয়েছে?